মাধ্যমিকের পরে ভালো ক্যারিয়ার গড়তে কোন স্ট্রিম বেছে নেওয়া উচিত? সাইন্স, আর্টস, কমার্সের ভবিষ্যৎ কি? মাধ্যমিক পরীক্ষার পর অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীদের মাথায় ঘুরতে থাকে একটাই প্রশ্ন, এবার কোন পথে এগোনো যাবে।
একদিকে পরীক্ষার ফলাফলের দুশ্চিন্তা এবং অপরদিকে উচ্চস্তরে সঠিক শাখা বেছে নেওয়ার চিন্তা একযোগে পড়ুয়াদের যেনো গুরুতর সমস্যাজনক পরিস্থিতিতে পড়তে লক্ষ্য করা যায়। সমস্যা হয় সঠিক স্ট্রিম বা শাখা বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে, সাইন্স – কমার্স – আর্টস এই তিনটি স্ট্রিম এর মধ্যে কোনটি বেশি ফলদায়ক সেখানেই জটিলতায় ভোগে ছেলেমেয়েরা।
সেই জন্য আগে থেকেই এই তিনটি স্ট্রিমের বিশেষত্ব, ভবিষ্যৎ সুযোগ এবং এবং প্রতিযোগিতা, এইসমস্ত বিষয়গুলি আগে থেকে যাচাই করে নেওয়া উত্তম কাজ। আজকের এই প্রতিবেদনে আপনারা বিস্তারিত জানতে পারবেন সাইন্স, আর্টস এবং কমার্সের অন্তর্গত কি কি বিষয় আছে এবং কোন কোন বিষয়গুলিতে ভবিষ্যতে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ পাবে ছাত্রছাত্রীরা।
সাইন্স বিভাগ (Science Stream)
সাইন্স বিভাগটিকে বর্তমানে শিক্ষা জগতে এবং ক্যারিয়ারের দুনিয়ায় বেশ গুরুত্বপুর্ণ মনে করা হয়। মাধ্যমিকের পরে 2 বছরের কোর্সে বিষয় বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে, আজকাল প্রত্যেক অভিভাকদের তাদের সন্তানকে জোর দিতে দেখা যায়। উজ্জ্বল ভবিষ্যতের চাবিকাঠি এই পথে নিশ্চিত জেনে, সাইন্স বিভাগ নিয়ে শিক্ষাজগতে গুরুতর তৎপরতা শুরু হয়েছে।
সাইন্স বিভাগে ক্যারিয়ার সুযোগ (Career Opportunity)
ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ার পেশাকে বেছে নিতে উদগ্রীব যে সকল ছাত্রছাত্রী, তাদের সাইন্স বিভাগকে বেছে নেওয়া উচিত উচ্চমাধ্যমিক স্তরে।
ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার, মার্চেন্ট, নেভি, রিসার্চার, ফরেনসিক সাইন্স, এথিক্যাল হ্যাকিং, মেডিকেল টেকনোলজি, ফার্মাসি |
সাইন্স স্ট্রিম প্রধানত দুইটি ভাগে বিভক্ত –
- PCB: মেডিক্যাল (বায়ো সায়েন্স)
- PCM: টেকনিক্যাল (পিওর সায়েন্স)
PCB ( মেডিক্যাল): পিসিবি স্ট্রিম অর্থাৎ ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, বায়োলজি এই তিনটি বিষয় নিয়ে হয়। যে সকল পড়ুয়ারা ভবিষ্যতে মেডিকেল ফিল্ডে প্রতিষ্ঠিত হতে ইচ্ছুক তারা এই সাইন্স বিভাগ গুলো মাধ্যমিকের পরে বেছে নিতে পারে। অংক যে সব ছাত্রছাত্রীদের বেশি ভালো নয় তারাও এই স্ট্রিম নিয়ে পড়তে পারে।
PCB এর অপশনাল বিষয়গুলি: –
- বায়োটেকনোলজি
- অংক
- সাইকোলজি
- ইকোনমিক্স
- ফিজিক্যাল এডুকেশন
- হোম সায়েন্স
কেরিয়ার অপশন PCB (বায়ো) তে?
- ডাক্তার (MBBS)
- ডেন্টিস্ট (BDS)
- আয়ুর্বেদ (BAMS)
- হোমিওপ্যাথি ( BHMS)
- ফিজিও থেরাপিস্ট (BPT)
- ভেটেনারি সায়েন্স (BVSC)
- বায়োটেকনোলজি
- প্যারামেডিকেল (Paramedical)
- ফার্মাসি (B.Pharm)
- নার্সিং (B.Sc)
PCM (টেকনিক্যাল): স্নাতক স্তরে ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক পড়ুয়াদের জন্য পিসিএম বা নন মেডিকেল বিভাগটি রয়েছে। PCM অর্থাৎ ফিজিক্স, কেমিস্ট্রি, ম্যাথ এই বিষয়গুলি। অংকে ভালো ছাত্র ছাত্রীদের জন্য এই বিভাগটি নিঃসন্দেহে উত্তম।
PCM এর অপশনাল বিষয়গুলি:-
- কম্পিউটার সাইন্স
- বায়োলজি
- ইকোনোমিক্স
- ফিজিক্যাল এডুকেশন
- সাইকোলজি
- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন
কেরিয়ার অপশন PCM (পিওর) বিভাগে
- ইঞ্জিনিয়ারিং (B.Tech./BE)
- আর্কিটেকচার (B. Arch)
- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন (BCA)
- কমার্শিয়াল পাইলট
- মার্চেন্ট নেভি/ ডিফেন্স (NDA/ CDS)
- এগ্রিকালচার (B.Sc)
- ম্যাথমেটিক্স (B.Sc)
- ফিজিক্স (B.Sc)
- কেমিস্ট্রি (B.Sc)
ওপরে উল্লেখিত দুটি বিভাগ ছাড়াও PCBM (জেনারেল সাইন্স) বিভাগটি রয়েছে যেখানে ছাত্রছাত্রীরা বায়োলজি এবং অঙ্ক দুটি বিষয়ই একসাথে পড়তে পারে। এই বিভাগেও ভালো ক্যারিয়ার সুযোগ পেতে পারে ছাত্রছাত্রীরা।
আরো দেখুন: Career After HS Science: উচ্চমাধ্যমিক সায়েন্স পড়ার পর কি কি অপশন আছে? সমস্ত লাইন
আর্টস/ হিউম্যানিটিজ বিভাগ (Arts Stream/Humanities)
আর্টস গ্রুপ বা কলা বিভাগ ছাত্রছাত্রীদের জন্য বর্তমানে ভালো ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে। আজকাল অনেক মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী আর্টস গ্রুপ বেছে নেওয়াকে প্রেফারেন্স দিচ্ছে। অনেক শিক্ষাত্রী যারা আর্টস বিষয় যেমন ইতিহাস, বাংলা, ভূগোল, ইংরেজি নিয়ে পড়তে ইচ্ছুক, তারা প্রচুর ভালো নম্বর নিয়ে মাধ্যমিকের পর এই বিষয় গুলি বেছে নেয়।
সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক যারা এবং বিশেষ করে শিক্ষকতার দুনিয়ায় নিজেদের ক্যারিয়ার গড়তে ছাত্রী ছাত্রীরা আর্টস গ্রুপ নিয়ে এগিয়ে যেতে পারবে। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য আর্টস গ্রুপ অনেক সুবিধাজনক ছাত্রছাত্রীর ক্ষেত্রে।
মাধ্যমিকের পরে আর্টস হিসেবে কোন কোন সাবজেক্ট বেছে নেওয়া যায়?
- ইতিহাস
- সমাজবিজ্ঞান
- রাষ্ট্রবিজ্ঞান
- ভূগোল
- মনোবিজ্ঞান
- অর্থনীতি
- এডুকেশন
- ইংরেজি
- দর্শন
- সংস্কৃত
- হোম সায়েন্স
- পরিবেশ
- আঞ্চলিক ভাষা এবং আরও অনেক বিষয় যা স্কুল অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
আর্টস নিয়ে পড়ে ভবিষ্যতে কি কি কেরিয়ার রয়েছে?
- শিক্ষক
- সাংবাদিক
- গ্রাফিক ডিজাইনার
- আইনজীবি
- ইভেন্ট ম্যানেজার
- অ্যানিমেটর
- প্রফেসর
- সিভিল সার্ভিস
- পুলিশ সার্ভিস
- ডিফেন্স এবং আরও অনেক চাকুরী ক্ষেত্র রয়েছে।
বিস্তারিত দেখুন: Career for Arts Students: আর্টস নিয়ে পড়ে কি কি হওয়া যায়? রইলো সেরা 10 কেরিয়ার ও চাকরি
কমার্স বা বাণিজ্য বিভাগ (Commerce Stream)
কমার্স বিভাগ বর্তমানে বিজ্ঞানের পরে অন্যতম পছন্দের বিভাগ পড়ুয়াদের জন্য। যেসব ছাত্রছাত্রীরা ব্যবসা, ব্যাংকি, ফাইনান্স দিকে ভবিষ্যতে মন দিতে চায় এবং আগ্রহী, তারা অর্থনীতি বা ইকোনমিক্স, অ্যাকাউন্টিং প্রভৃতি বিষয় সহযোগে কমার্স স্ট্রিমটি বেছে নিতে পারে।
কমার্স বিভাগ নিয়ে ভবিষ্যতে কি কি চাকরির সুযোগ আছে?
- অ্যাকাউন্ট্যান্ট
- ব্যাঙ্ক ম্যানেজার
- ফিনান্স ম্যানেজার/ আর্থিক পরিকল্পক
- ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার
- কোম্পানি সেক্রেটারি
- ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টিং
- চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট (CA)
- কমার্শিয়াল আইনবিদ (Lawyer)
কমার্সে কি কি বিষয় নিয়ে পড়াশুনো করতে পারবে ছাত্রছাত্রীরা।
- অ্যাকাউন্ট্যাসি (হিসাব শাস্ত্র)
- বিজনেস স্টাডিজ
- অর্থনীতি (Economics)
- ইংরেজি
- স্ট্যাটিসটিকস
- ম্যাথমেটিক্স
- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন।
উচ্চমাধ্যমিক ভোকেশনাল: HS Vocational (বৃত্তিমূলক শাখা)
এটি একইভাবে উচ্চমাধ্যমিকের স্তরের একটি শাখা (10+2), তবে এটি কারিগরি বা বৃত্তিমূলক শিক্ষার সঙ্গে সম্পর্কিত। অনেক ছাত্র-ছাত্রী পেশাদারীর প্রশিক্ষণের জন্য ভোকেশনাল কোর্স ভর্তি হয়ে থাকে।
উচ্চমাধ্যমিক ভোকেশনাল (HS Vocational) শিক্ষা হল এক ধরনের বৃত্তিমূলক (Vocational) প্রশিক্ষণ, যা শিক্ষার্থীদের নির্দিষ্ট দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞান প্রদান করে। এটি সাধারণ শিক্ষার বিকল্প হিসেবে কাজ করে, এখানে একইভাবে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের মতো বাংলা এবং ইংরেজি বাধ্যতামূলকভাবে পড়া হয়। সঙ্গে থাকে অন্যান্য কারিগরি মূলক বিষয় –
- ইলেকট্রিক্যাল
- ইলেকট্রনিক্স
- অটোমোবাইল
- কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশন
- ফুড প্রসেসিং ও ক্যাটারিং
- হেলথ কেয়ার
- অ্যাগ্রিকালচার
- অ্যানিমেল হাজবেন্ড্রি
এরপরে সাধারণ ট্রেনি হিসাবে লোকাল এলাকায় বা কোন ছোট কোম্পানিতে চাকরির সুযোগ থাকে। পরবর্তীকালে এই ছাত্ররা ছাত্রীরা ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং করতে পারে।
পলিটেকনিক কোর্স (ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং)
মাধ্যমিকের পর উচ্চমাধ্যমিক না পড়ে অনেকেই কম সময়ের প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য পলিটেকনিক কোর্স করে থাকে।। পলিটেকনিক কোর্সের পাঠক্রম 3 বছরের। এটি টেকনিক্যাল কোর্সের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ফলে কোর্স কমপ্লিট এর পর ছাত্রছাত্রীরা ভালো চাকরি পেতে পারবে।
আগ্রহী ছাত্রছাত্রীরা যারা পলিটেকনিকের পর আরও পড়াশুনা করতে চায়, তারা এরপর B.Tech করতে পারবে। সেই ক্ষেত্রে, Lateral entry এর মাধ্যমে পলিটেকনিক ছাত্রছাত্রীরা B.Tech এর দ্বিতীয় কোর্সে ভর্তি হতে পারবে।
আইটিআই কোর্স (ITI Course)
ITI এর সম্পূর্ণ নাম Industrial Training Institutes, এটি মূলত একটি ট্রেনিং কোর্স। মাধ্যমিকের পরে চাকরি পেতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য রয়েছে ITI কোর্স। ITI কোর্সের মেয়াদ 1 বছর থেকে 3 বছর অবধি মেয়াদ রয়েছে। মাত্র একটি কোর্স 3 বছরের এবং বাকি কোর্স গুলি 1 থেকে 2 বছরের।
আরো দেখো:
আজকের আলোচিত বিষয়গুলি ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমিকের পরে সঠিক বিষয় নিয়ে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। তবে, পড়াশুনার বিকল্প নেই। নিরপেক্ষভাবে, এই মতামত আজকের দুনিয়ায় সর্বাপেক্ষা মূল্যবান।
মাধ্যমিকের পরে সাধারণ উচ্চমাধ্যমিক পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। মাধ্যমিকের পরে চাকরির জন্য পড়ুয়াদের বয়স উপযুক্ত হয়না। তাই অন্তত স্নাতক ডিগ্রি না নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের কর্মজীবনে প্রবেশ না করাই উত্তম।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -
আরও আপডেট »