ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় সেনাবাহিনীর পাশাপাশি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে দেশের আধাসামরিক বাহিনীগুলি (Paramilitary Forces)। এর ব্যাপারে তোমরা আশাকরি প্রায় সবাই শুনেছ, কিন্তু Paramilitary Force কি, কোন কোন Force – এর অন্তর্গত রয়েছে ইত্যাদি বিষয়গুলি অনেকেই ঠিকমতো জানে না।
আজকের প্রতিবেদনে আমি Paramilitary Force – সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য তোমাদের জানাবো। ভারতের আধাসামরিক বাহিনী কত রকম ফোর্স রয়েছে? তারা কোন কোন বিশেষ সেবার সঙ্গে যুক্ত? এবং তোমরা কিভাবে নিজেরাও যুক্ত হতে পারবে শেষে ছোট করে আলোচনা করব।
ভারতের আধাসামরিক বাহিনী (Indian Paramilitary Forces): বিস্তারিত
ভারতে Ministry Of Home Affairs – এর অধীনে 07- টি সশস্ত্র কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই নির্দিষ্ট কার্যক্ষেত্র রয়েছে; এদেরকেই Paramilitary Force বলা হয়ে থাকে।
এগুলি মূলত দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সীমানা রক্ষা, সন্ত্রাস দমন, এবং আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে মোতায়েন করা হয়। বর্তমানে, ভারত সরকারের অধীনে বিভিন্ন আধাসামরিক বাহিনী রয়েছে যারা আলাদা আলাদা মিশন এবং দায়িত্ব পালন করে।
Paramilitary Force- এর অন্তর্গত কোন কোন বাহিনী রয়েছে?
Paramilitary Force- এর অন্তর্গত যে 07- টি কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে, সেগুলো সম্পর্কে একে একে বিস্তারিত জানাচ্ছি –
ভারতের আধাসামরিক বাহিনীর তালিকা (Forces under Indian Paramilitary Forces)
বাহিনীর নাম | সংক্ষিপ্ত রূপ | পরিচালনাকারী মন্ত্রণালয় |
---|---|---|
সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স | CRPF | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (MHA) |
বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স | BSF | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
সেন্ট্রাল ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিকিউরিটি ফোর্স | CISF | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
ইন্দো-তিব্বত বর্ডার পুলিশ | ITBP | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
সশস্ত্র সীমা বল | SSB | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
আসাম রাইফেলস | AR | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় (অপারেশন: সেনাবাহিনী দ্বারা) |
ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড | NSG | স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় |
Central Reserve Police Force (CRPF)
1939 সালে ভারতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য CRPF – এর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল। বর্তমানে ভারতে যেসমস্ত জায়গায় অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে পরে সেখানে CRPF- মোতায়েন করা হয়।
বিস্তারিত: CRPF Eligibility Exam: সিআরপিএফ কিভাবে হবে? যোগ্যতা, পরীক্ষা, বেতন
Border Security Force (BSF)
মূলত 1985 সালে এই কেন্দ্রীয় বাহিনীর পথ চলা শুরু হয়। জম্মু ও কাশ্মীর সহ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের সীমান্তের দায়িত্ব রয়েছে BSF- এর উপর।
Central Industrial Security Force (CISF)
CISF- এর পথ চলা শুরু হয় মূলত 1969 সালে। এরা মূলত Public Sector Undertakings বা PSUs সঙ্গে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিয়াল এরিয়া গুলির সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে। এছাড়াও ভারতের বিভিন্ন বিমানবন্দরের সুরক্ষার দায়িত্ব CISF- এর উপরে রয়েছে।
Indo Tibetan Border Police (ITBP)
ITBP- এর প্রতিষ্ঠা হয় 1962 সালে। এই কেন্দ্রীয় বাহিনী মূলত Indo-Tibet সীমান্তের পর্বত অধ্যুষিত এলাকার সুরক্ষা নিশ্চিত করে। পাশাপাশি এই বাহিনী Indo-China সীমান্তের বিভিন্ন এলাকার সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।
Sashastra Seema Bal (SSB)
1963 সালে এই বাহিনীর প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে Indo-Nepal এবং Indo-Bhutan সীমান্তে সুরক্ষার দায়িত্ব SSB – এর উপর রয়েছে। পাশাপাশি ভোটের সময় বিভিন্ন স্পর্শ কাতর Polling Booth – গুলির সুরক্ষার দায়িত্ব থাকে SSB- এর উপর।
Assam Rifles (AR)
এটি ভারতের সবচেয়ে পুরনো Paramilitary Force, যা মূলত উত্তর-পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন গুরুদায়িত্ব পালন করে। প্রসঙ্গত, Indo – Myanmar সীমান্তের সুরক্ষার দায়িত্বে রয়েছে আসাম রাইফেলস।
National Security Guard (NSG)
NSG অর্থাৎ ন্যাশনাল সিকিউরিটি গার্ড, ভারতের একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত এলিট কমান্ডো বাহিনী, যাদের গঠন করা হয়েছে সন্ত্রাসবাদ দমন, হাইজ্যাক রেসকিউ অপারেশন, এবং ভিআইপি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্দেশ্যে।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, 26/11 Mumbai Terrorist Attack – এর সময় তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার এই বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বাহিনীর ব্যবহার করেছিল।
এটি একটি স্পেশাল ফোর্স এবং এটি সাধারণত Paramilitary Forces হিসেবে বিবেচিত না হলেও, অনেক সময় Central Armed Police Forces (CAPFs)-এর একটি অংশ হিসেবে আলোচিত হয়, কারণ এটি Home Ministry-র অধীনে কাজ করে এবং সদস্যরা অন্যান্য বাহিনী থেকে বাছাই করা হয়।
ভারতের আধাসামরিক বাহিনী (Paramilitary Forces) – নিয়োগ প্রক্রিয়া ও যোগদানের গাইড
ভারতের আধাসামরিক বাহিনীতে (BSF, CISF, CRPF, ITBP, SSB, NSG) নিয়োগ প্রক্রিয়া একাধিক ধাপে সম্পন্ন হয়। প্রথমে প্রার্থীদের একটি লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। এরপর উত্তীর্ণ প্রার্থীদের শারীরিক সক্ষমতা পরীক্ষায় (Physical Efficiency Test), উচ্চতা-মাপজোক (Measurement Test), এবং চিকিৎসা পরীক্ষায় (Medical Test) অংশগ্রহণ করতে হয়। কিছু ক্ষেত্রে লিখিত পরীক্ষার আগে বা পরে সরাসরি সাক্ষাৎকার বা নথি যাচাই প্রক্রিয়াও (Document Verification) হয়।
প্রত্যেক বাহিনী তাদের নিজস্ব শারীরিক ও শিক্ষাগত মানদণ্ড অনুসরণ করে থাকে, এবং নিয়োগের জন্য জাতীয় স্তরের যেমন SSC বা UPSC-এর মাধ্যমে এবং কখনও কখনও নিজস্ব ডিপার্টমেন্টের মাধ্যমে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
SSC GD (General Duty): এই পরীক্ষার মাধ্যমে BSF, CRPF, CISF, SSB, ITBP ইত্যাদি বাহিনীতে কনস্টেবল পদে নিয়োগ হয়। মাধ্যমিক পাশ হলেই আবেদন করা যায়। এটি Staff Selection Commission-এর মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
বিস্তারিত: SSC GD Exam, Eligibility: কেন্দ্রীয় বাহিনীতে চাকরির পরীক্ষা! যোগ্যতা কি লাগবে? পরীক্ষা পদ্ধতি
UPSC CAPF Exam: এই পরীক্ষার মাধ্যমে Assistant Commandant পদে নিয়োগ হয়। যে কোনো বিষয়ে স্নাতক পাশ থাকলেই আবেদন করা যায়। এটি একটি Officer Level পোস্ট, যেখানে নেতৃত্বের দায়িত্ব থাকে। CAPF Exam হলো একটি highly competitive পরীক্ষার মধ্যে একটি।
UPSC CSE IPS Officer: UPSC Civil Services পরীক্ষার মাধ্যমে IPS (Indian Police Service)-এ যোগদান সম্ভব, যেখান থেকে আপনাকে আধাসামরিক বা রাজ্য পুলিশে উচ্চ পদে নিযুক্ত করা যেতে পারে। এটি একটি বিস্তৃত ও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুতির বিষয়।
ডিপার্টমেন্টাল রিক্রুটমেন্ট: অনেক সময় বাহিনী নিজস্বভাবে প্রয়োজনের কারণে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে (Departmental recruitment)। এ ধরনের বিজ্ঞপ্তিগুলি বাহিনীর নিজস্ব পোর্টালে পাওয়া যায়।
আরো দেখবে: UPSC All Exam List: UPSC-তে কি কি সরকারি চাকরির পরীক্ষা হয়ে থাকে? বিস্তারিত তালিকা
শারীরিকভাবে সুস্থ এবং দেশসেবার মানসিকতা নিয়ে এগিয়ে আসতে চান, তাহলে ভারতের আধাসামরিক বাহিনী আপনার জন্য এক চমৎকার ক্যারিয়ার বিকল্প। শুধু লেখাপড়া নয়, ফিজিকাল ফিটনেস এবং নিয়মিত প্রস্তুতিও জরুরি এই পরীক্ষাগুলিতে সফল হতে।
আজকের এই প্রতিবেদন থেকে আশা করছি তোমরা সম্পূর্ণ আধা সেনার ব্যাপারটা জানতে পেরেছো।এডুটিপস বাংলার ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে আছে, সর্বতভাবে তাদের পড়াশোনা থেকে ক্যারিয়ারের সাহায্য করার জন্য।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -
আরও আপডেট »