মাধ্যমিক বাংলা অভিষেক কবিতা সহজ অর্থ: (Abhisek Kobita Class 10)

Abhishek Bengali poem Class 10 bangla kobita অভিষেক

আমাদের পাঠ্য ‘অভিষেক’ কবিতাটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের (Michael Madhusudan Dutta) কালজয়ী সৃষ্টি ‘মেঘনাদবধ কাব্য‘-এর প্রথম সর্গ থেকে গৃহীত। প্রসঙ্গক্রমে বলা যায় যে, এই প্রথম সর্গের নামও ‘অভিষেক‘ -Abhishek, যা কবির দেওয়া।

   

মাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার ক্ষেত্রে এই অভিষেক কবিতাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি কবিতা। অনেকেই এই কবিতাটি ” অমিত্রাক্ষর ছন্দ” লেখার জন্য বেশিরভাগ ছাত্রছাত্রী এই কবিতাটির অর্থ বুঝতে পারেননি। তাই সেই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য আজকের এই পোস্টে অভিষেক কবিতাটির সরল অর্থ দেওয়া রইল।

কবিতাঅভিষেক
কবিমাইকেল মধুসূদন দত্ত
গৃহীতমেঘনাদবধ কাব্য – প্রথম সর্গ
সাজেশনঅত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

অভিষেক – মাইকেল মধুসূদন দত্ত (সহজ বাংলা অর্থ)

কনক-আসন ত্যজি, বীরেন্দ্রকেশরী ইন্দ্ৰজিৎ, প্রণমিয়া, ধাত্রীর চরণে, কহিলা, – “কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি এ ভবনে? কহ দাসে লঙ্কার কুশল।”

➡️ কনক আসন ত্যাগ করে মহাবীর ইন্দ্রজিৎ ধাইমায়ের পায়ে প্রণাম করে তাকে জিজ্ঞাসা করল, “আজকে কি কারনে এখানে এসেছেন মা। তোমার দাসকে বলো লঙ্কায় কি হচ্ছে?”

শিরঃ চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা উত্তরিলা;— “হায়! পুত্র, কি আর কহিব কনক-লঙ্কার দশা ! ঘোরতর রণে, হত প্রিয় ভাই তব বীরবাহু বলী ! তার শোকে মহাশোকী রাক্ষসাধিপতি, সসৈন্য সাজেন আজি যুঝিতে আপনি।”

➡️ তখনই মাথায় চুম্বন করিল ওই ছদ্দবেশি দেবী লক্ষী এবং আপসোস করে বলল, “কি বলবো এই সোনার লঙ্কার দশা, এই বিশাল যুদ্ধে তোমার প্রিয় ভাই বীরবাহুর মৃত্যু হয়েছে। আর তার দুঃখেতেই দুঃখিত রাক্ষস রাজা রাবণ”। তাই তুমি তাড়াতাড়ি যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নাও।

জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু বিস্ময় মানিয়া;- “কি কহিলা, ভগবতি? কে বধিল কবে প্রিয়ানুজে? নিশা-রণে সংহারিনু আমি রঘুবরে ; খণ্ড খণ্ড করিয়া কাটিনু বরষি প্রচণ্ড শর বৈরিদলে ; তবে এ বারতা, এ অদ্ভুত বারতা, জননি কোথায় পাইলে তুমি, শীঘ্র কহ দাসে।”

➡️ ইন্দ্রজিৎ অবাক হয়ে বললেন মা তুমি এটা কি বললে? কে হত্যা করল আমার প্রিয় ভাইকে? আমি তো রাত্রীকালীন যুদ্ধে রাম লক্ষণ ও তাদের সৈন্যদের হত্যা করেছিলাম তাহলে এই অদ্ভুত সংবাদ তুমি কোথা থেকে পেলে?

রত্নাকর রত্নোত্তমা ইন্দিরা সুন্দরী উত্তরিলা; “হায়। পুত্র, মায়াবী মানব সীতাপতি ; তব শরে মরিয়া বাঁচিল। যাও তুমি ত্বরা করি ; রক্ষ রক্ষঃকুল—
মান, এ কালসমরে, রক্ষঃ-চূড়ামণি!

➡️ এই কথা শুনে সমুদ্র কন্যা ইন্দিরা সুন্দরী আফসোস করে বললেন যে, “সীতার স্বামী একজন মায়াবী মানুষ, আর সে তোমার বানে মরেও বেঁচঁ উঠেছে। তাই তুমি এই সোনার লঙ্কা এবং রাক্ষসূল রক্ষা করার জন্য তাড়াতাড়ি যুদ্ধে যাও।

ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী মেঘনাদ; ফেলাইলা কনক-বলয় দুরে; পদতলে পড়ি শোভিল কুণ্ডল, যথা অশোকের ফুল অশোকের তলে আভাময়! “ধিক্ মোরে” কহিলা গম্ভীরে কুমার, “হা ধিক্ মোরে! বৈরিদল বেড়ে স্বর্ণলঙ্কা, হেথা আমি বামাদল মাঝে? এই কি সাজে আমারে, দশাননাত্মজ আমি ইন্দ্রজিৎ? আন রথ ত্বরা করি; ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।”

➡️ এই কথা শুনে মেঘনাথ রেগে গিয়ে তার গলার ফুলের মালা ছিড়ে ফেলে দেয়। তার সঙ্গে তার হাতে থাকা সোনার বালা এবং সোনার কানের দুল ফেলে দেয়, যেমন করে অশোক গাছের তোলা অশোক ফুল পড়ে থাকে।
  আর সে আত্মধিক্কারে বলে, “সোনার লঙ্কা ঘিরে শত্রুদল জমা হয়েছে, আর এখানে আমি প্রমদ কাননে নারীদের সঙ্গে আমদ প্রমোদ করছি। এটা কি আমাকে সাজে? তাড়াতাড়ি রথ আনো, আমি শত্রুদের বিনাশ করে এই অপবাদ ঘুচাবো।

সাজিলা রথীন্দ্রর্যভ বীর-আভরণে, হৈমবতীসুত যথা নাশিতে তারকে মহাসুর; কিম্বা যথা বৃহন্নলারূপী কিরীটী, বিরাটপুত্র সহ, উদ্ধারিতে গোধন, সাজিলা শুর শমীবৃক্ষমূলে।

➡️ ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধের পোশাকে তৈরি হলো যেমন করে কার্তিক তারকাসুর বধের সময় সজ্জিত হয়েছিলেন কিংবা বিরাট রাজার গোধন রক্ষার্থে নপুংসক ছদ্মবেশধারী অর্জুন যেমন বীর সাজে সজ্জিত হয়েছিলেন।

মেঘবর্ণ রথ; চক্র বিজলীর ছটা; ধ্বজ ইন্দ্রচাপরূপী;তুরঙ্গম বেগে আশুগতি। রথে চড়ে বীর-চূড়ামণি বীরদর্পে, হেন কালে প্রমীলা সুন্দরী, ধরি পতি-কর-যুগ (হায় রে যেমতি হেমলতা আলিঙ্গয়ে তরু-কুলেশ্বরে) কহিলা কাঁদিয়া ধনি; “কোথা প্রাণসখে, রাখি এ দাসীরে, কহ, চলিলা আপনি?

➡️ মেঘের মতো রথ এবং বিজলী ছটা যুক্ত চক্র এবং ইন্দ্রের ধনুকের মতো পতাকা আর তার রথের ঘোড়া যেন দ্রুত গতিতে ছুটছে। আর এই রথে যখন ইন্দ্রজিৎ উঠতে যাবে ঠিক তখনই ইন্দ্রজিতের স্ত্রী প্রমিলা সুন্দরী তার পা ধরে তাকে বাধা দিল। আর বলল আপনি এই দাসীকে রেখে কোথায় যাচ্ছেন।

কেমনে ধরিবে প্রাণ তোমার বিরহে এ অভাগী? হায়, নাথ, গহন কাননে, ব্রততী বাঁধিলে সাধে করি-পদ, যদি তার রঙ্গরসে মনঃ না দিয়া, মাতঙ্গ যায় চলি, তবু তারে রাখে পদাশ্রয়ে যূথনাথ। তবে কেন তুমি, গুণনিধি,
ত্যজ কিঙ্করীরে আজি?”

➡️ কেমন করে জীবন যাপন করব তোমাকে ছাড়া? হাতির পায়ে লতাপাতা জড়ালে হাতির কোনো যায় আসে না, তাহলে তুমি আমাকে ছেড়ে কিভাবে যাচ্ছেন?

হাসি উত্তরিলা মেঘনাদ, “ইন্দ্ৰজিতে জিতি তুমি, সতি, বেঁধেছ যে দৃঢ় বাঁধে, কে পারে খুলিতে সে বাঁধে ? ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া কল্যাণি, সমরে নাশি, তোমার কল্যাণে রাঘবে। বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখি।”

➡️ মেঘনাথ হেসে উত্তর দিল “তুমি আমার মত মানুষ ইন্দ্রজিৎকে জয় করেছো। তোমার আর আমার বাঁধন কেউ ভাঙতে পারবে না। এখন আমাকে বিদায় দাও, রাম-লক্ষণ কে দমন করে আমি খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।

উঠিল পবন-পথে ঘোরতর রবে, রথবর, হৈমপাখা বিস্তারিয়া যেন উড়িলা মৈনাক-শৈল অম্বর উজলি ! শিঞ্জিনী আকর্ষি রোষে, টঙ্কারিলা ধনুঃ বীরেন্দ্র, পক্ষীন্দ্র যথা নাদে মেঘ মাঝে ভৈরবে। কাঁপিল লঙ্কা, কাঁপিল জলধি !

➡️ এই বলে রথে উঠে বিশাল আওয়াজ করে যাত্রা শুরু করল যেন মনে হচ্ছিল মৈনাক পর্বত উজ্জ্বলভাবে উড়ে চলেছে। যখনই ইন্দ্রজিতের মন তার ধনুকের দিকে পড়ল তখন এমন একটি আওয়াজ হল যেটা শুনে মনে হচ্ছে গরুর পাখি বিশাল আওয়াজ করছে। এই আওয়াজে সোনার লঙ্কা এবং জলধি কেঁপে উঠল।

সাজিছে রাবণ রাজা, বীরমদে মাতি;- বাজিছে রণ-বাজনা; গরজিছে গজ; হ্রেষে অশ্ব; হুঙ্কারিছে পদাতিক, রথী; উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ; উঠিছে আকাশে -বিভা। হেন কালে তথা, কাঞ্চন-কঞ্চুক-বিভা। হেন কালে তথা দ্রুতগতি উত্তরিলা মেঘনাদ রথী।

➡️ লঙ্কার রাজা রাবণ যুদ্ধে যাওয়ার জন্য হচ্ছেন—রণবাদ্য বাজছে, হাতি, ঘোড়া ও বাহিনী শব্দ করে চলেছে। ঠিক সেই সময় ইন্দ্রজিৎ রথ থেকে নামলেন আর উত্তর দিলেন।

নাদিলা করদল হেরি বীরবরে মহাগর্বে। নমি পুত্র পিতার চরণে, করযোড়ে কহিলা;—“হে রক্ষঃ-কুল-পতি, শুনেছি, মরিয়া না কি বাঁচিয়াছে পুনঃ রাঘব ? এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি ! কিন্তু অনুমতি দেহ; সমূলে নির্মূল করিব পামরে আজি! ঘোর শরানলে করি ভস্ম, বায়ু-অস্ত্রে উড়াইব তারে; নতুবা বাঁধিয়া আনি দিব রাজপদে।”

➡️ ইন্দ্ৰজিৎকে দেখে সৈন্যদল গর্জন করে উঠল। পিতার চরণে প্রণাম করে মেঘনাদ হাতজোড় করে বললেন, হে পিতা! শুনলাম রাম নাকি বেঁচে উঠেছে? এ কীরকম মায়া বুঝতে পারছি না । আপনি অনুমতি দিন পিতা—আমি অগ্নিবাণে তাকে ভস্ম করে বায়ু অস্ত্রে উড়িয়ে দিই, নয়তো আপনার চরণে বেঁধে এনে দিই।

আলিঙ্গি কুমারে চুম্বি শিরঃ, মৃদুস্বরে
উত্তর করিলা তবে স্বর্ণ-লঙ্কাপতি;
“রাক্ষস-কুল-শেখর তুমি, বৎস; তুমি রাক্ষস-কুল- ভরসা। এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্ৰাণ মম পাঠাইতে তোমা বারম্বার। হায়, বিধি বাম মম প্রতি। কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে, কে কবে শুনেছে, লোক মরি পুনঃ বাঁচে?”

➡️ কুমার ইন্দ্রজিৎকে আলিঙ্গন করে মাথায় চুম্বন করে রাবণ বললেন- তুমি রাক্ষস বংশের মধ্যমণি, ভরসা। এই মৃত্যুরূপী যুদ্ধে তোমাকে বারবার পাঠাতে মন চাইছে না। বিধাতা আমার প্রতি বিরূপ। কেউ কি কোনোদিন শুনেছ শিলা জলে ভাসে বা মানুষ মরে বাঁচে।

উত্তরিলা বীরদর্পে অসুরারি-রিপু;-
“কি ছার সে নর, তারে ডরাও আপনি, রাজেন্দ্র ? থাকিতে দাস, যদি যাও রণে তুমি, এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে। হাসিবে মেঘবাহন; রুষিবেন দেব অগ্নি। দুই বার আমি হারানু রাঘবে; আর একবার পিতঃ, দেহ আজ্ঞা মোরে; দেখিব এবার বীর বাঁচে কি ঔষধে!”

➡️ ইন্দ্রজিৎ বীরদর্পে রাজেন্দ্র অর্থাৎ পিতা রাবণকে বললেন—কী এমন মানুষ যে তাকে ভয় পান! আমি থাকতে আপনি যদি যুদ্ধে যান তবে তা কলঙ্ক হিসেবে প্রচারিত হবে, ইন্দ্র হাসবে ও অগ্নি রুষ্ট হবেন। এবার পিতা আমায় একবার আজ্ঞা করুন দেখব কোন্ ওষুধে সে বাঁচে।

কহিলা রাক্ষসপতি; – “কুম্ভকর্ণ, বলী ভাই মম, -তায় আমি জাগানু অকালে ভয়ে; হায়, দেহ তার, দেখ, সিন্ধু-তীরে ভূপতিত, গিরিশৃঙ্গ কিম্বা তরু যথা বজ্রাঘাতে! তবে যদি একান্ত সমরে ইচ্ছা তব, বৎস, আগে পূজ ইষ্টদেবে,— নিকুম্ভিলা যজ্ঞ সাঙ্গ কর, বীরমণি ! সেনাপতি পদে আমি বরিণু তোমারে। দেখ, অস্তাচলগামী দিননাথ এবে; প্রভাতে যুঝিও, বৎস, রাঘবের সাথে।”

➡️ রাক্ষসপতি রাবণ বললেন, ভয়ে অকালে আমি বলশালী ভ্রাতা কুম্ভকর্ণকে জাগালাম। সমুদ্রতীরে সে ভূপতিত পর্বতচূড়া বা বজ্রাঘাতে ” ভগ্ন গাছের মতো পড়ে আছে। পুত্রকে উদ্দেশ্য করে রাবণ বলেন, যদি একান্তই যুদ্ধে যাওয়ার ইচ্ছা থাকে তবে নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে ইষ্টদেবের পূজা আগে শেষ করো। সেনাপতি পদে তোমাকে বরণ করে নিলাম। সূর্য অস্তগামী, তাই রাঘবের সঙ্গে সকালে যুদ্ধে যেও।

এতেক কহিয়া রাজা, যথাবিধি লয়ে গঙ্গোদক, অভিষেক করিলা কুমারে।

➡️ এইসব বলে রাবণ গঙ্গাজল-সহ বিধি মেনে কুমার ইন্দ্রজিৎকে অভিষিক্ত করলেন।

তো প্রিয় ছাত্র-ছাত্রীরা আশা করছি এই সরল অর্থ থেকে তোমরা এই অভিষেক কবিতাটি সম্পূর্ণ অর্থই বুঝতে পেরেছ যদি কোন অংশ বুঝতে না পারো তাহলে Contact us গিয়ে আমাদেরকে মেসেজ করতে পারো।

Abhishek Bengali Poem Class 10 Bangla Kobita অভিষেক – Abhishek Bengali poem by Michael Madhusudan Dutta

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -

Join Group

Telegram