বর্তমান যুগে শুধুমাত্র ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা সরকারি চাকরিই নয়, কৃষি (Agriculture) নিয়ে পড়াশোনাও এক নতুন দিশা দেখাচ্ছে ভবিষ্যৎ গড়ার পথে। আমাদের দেশের অর্থনীতি এখনও অনেকাংশে কৃষিনির্ভর। সেই কারণে কৃষি বিজ্ঞানের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। সেই জায়গা থেকেই গবেষণামূলক ক্ষেত্রে আসে এগ্রিকালচার, কৃষিবিজ্ঞান ও কৃষিপ্রযুক্তি নিয়ে পড়াশোনা।
এই পোস্টে আমরা বিস্তারিতভাবে জানবো উচ্চমাধ্যমিকের পর কীভাবে এগ্রিকালচারে পড়াশোনা শুরু করা যায়, কী কী কোর্স রয়েছে, কোন কোন কলেজ ভালো, এবং ভবিষ্যতের চাকরির সুযোগ কেমন, সহজ করে পশ্চিমবঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে।
🌾 Study Agriculture after 12th (BSc/BTech): এগ্রিকালচার নিয়ে কিভাবে ভর্তি হবে!
উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) পাস করার পর বিজ্ঞান (Science) বিভাগে পড়ুয়া বহু ছাত্রছাত্রীর কাছে কৃষি নিয়ে পড়াশোনা (Agriculture Education) একটি দারুন কেরিয়ার অপশন হতে পারে। পরিবেশ, প্রযুক্তি, খাদ্যনিরাপত্তা ও কৃষিভিত্তিক ভবিষ্যৎ গঠনে এগ্রিকালচার একটি অভিনব ও সম্মানজনক ক্ষেত্র।
বর্তমানে ভারত ও পশ্চিমবঙ্গে কৃষিশিক্ষার সুযোগ অনেক বেড়েছে এবং এই বিষয়ে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে সরকারি ও বেসরকারি বহু চাকরি ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
🎓 UG (স্নাতক) কোর্সের জন্য যোগ্যতা (Eligibility Criteria)
উচ্চমাধ্যমিক পাস করার পর কৃষি নিয়ে পড়তে চাইলে নিচের যোগ্যতাগুলো আবশ্যক—
🔹 বিষয়: উচ্চমাধ্যমিকে পদার্থবিদ্যা (Physics), রসায়ন (Chemistry), জীববিদ্যা/গণিত (Biology/Mathematics) থাকতেই হবে।
🔹 নূন্যতম নম্বর: সাধারণত ৫০%–৬০% নম্বর প্রয়োজন (Category অনুযায়ী ভিন্ন হতে পারে)।
🔹 বয়সসীমা: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৭ বছর (Minimum) হতে হবে ভর্তি সময়।
🔹 বোর্ড স্বীকৃতি: অবশ্যই সরকার স্বীকৃত বোর্ড (Recognized Board) থেকে 10+2 পাশ করতে হবে।
বিষয়ভিত্তিক কম্বিনেশন (Subject Streams):
ছাত্রছাত্রীরা তাদের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বিষয়ের উপর ভিত্তি করে নিচের যেকোনো একটি স্ট্রিম বেছে নিতে পারেন—
- PCB: Physics, Chemistry, Biology
- PCM: Physics, Chemistry, Mathematics
- PCA: Physics, Chemistry, Agriculture
- ABC: Agriculture, Biology, Chemistry
🏫 পশ্চিমবঙ্গের কৃষি পড়াশোনার সুযোগ (Study Options in West Bengal)
পশ্চিমবঙ্গের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে স্নাতক অনার্স BSc এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দুটোই কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। রাজ্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে সাধারণত নিজস্ব পরীক্ষা এবং মেরিট লিস্ট কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে ভর্তি হয়।
অপরদিকে কেন্দ্র সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে, CUET – কমন ইউনিভার্সিটি এন্ট্রান্স টেস্টের মাধ্যমে ভর্তি নেওয়া হয়ে থাকে যেখানে সর্বভারতীয়ব্যাপী পড়াশোনা সুযোগ থাকে।
প্রথমে আমরা BSc Agriculture পশ্চিমবঙ্গের কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ নিয়ে আলোচনা করব –
1. Bidhan Chandra Krishi Viswavidyalaya (BCKV)
পশ্চিমবঙ্গের প্রধান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে স্নাতক অনার্স এবং ইঞ্জিনিয়ারিং দুটোই কৃষি বিজ্ঞান নিয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে।
- স্নাতকে ভর্তি (BSc) সরাসরি নিজস্ব এন্ট্রান্স পরীক্ষা (Entrance Test) নেয় না।
- উচ্চমাধ্যমিকের মার্কশিট ও কাউন্সেলিং (Counselling) ভিত্তিতে ভর্তি হয়।
➥ বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: https://www.bckv.edu.in/
2. Uttar Banga Krishi Viswavidyalaya (UBKV)
- কোচবিহার জেলায় অবস্থিত রাজ্য সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।
- এখানেও B.Sc Agriculture ও Horticulture পড়ানো হয়।
- ভর্তি হয় মূলত মেরিট (Merit) এবং কাউন্সেলিং (Counselling)-এর মাধ্যমে।
➥ উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় অফিসিয়াল ওয়েবসাইট: https://www.ubkv.ac.in/
3. Visva-Bharati University (Palli Siksha Bhavana)
- শান্তিনিকেতনে অবস্থিত।
- এখানে কৃষি ও গ্রামীণ উন্নয়ন বিষয়ে BSc কোর্স পড়ানো হয়।
- ভর্তি হয় ইউনিভার্সিটির নিজস্ব মেরিট লিস্টের মাধ্যমে।
B.Tech Agriculture – এগ্রিকালচার ইন্জিনিয়ারিং
এছাড়াও পশ্চিমবঙ্গে সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রতিষ্ঠান বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় – B.Tech in Agriculture Engineering পড়ানো হয়।
এই কোর্সে ভর্তি হতে হলে WBJEE (West Bengal Joint Entrance Examination) দিতে হয়।
✅ WBJEE র্যাংক ও কাউন্সেলিং-এর মাধ্যমে ভর্তি হয় এই কোর্সে, সাধারণত 1000-এর মধ্যে Rank থাকতে হয়। ভবিষ্যতে কৃষি প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি, সেচব্যবস্থা (Irrigation), ফার্ম মেকানাইজেশন-এর মতো ক্ষেত্রে কাজ করা যায়।
💼 চাকরির সুযোগ ও ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার (Career & Job Opportunities)
কৃষি ও সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলিতে পড়াশোনা করার পর একজন ছাত্রছাত্রী শুধুমাত্র কৃষিবিজ্ঞান নয়, বরং গবেষণা, প্রশাসন, ব্যবসা ও শিক্ষাক্ষেত্রেও উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে।
🌟 প্রধান চাকরির ক্ষেত্র ও সুযোগসমূহ
- 🏢 সরকারি চাকরি: কৃষি আধিকারিক (Agricultural Officer), ব্লক ডেভেলপমেন্ট অফিসার (BDO)।
- 🔬 গবেষণা ও উন্নয়ন: ICAR, IARI-র মতো সংস্থায় কৃষি বিজ্ঞানী বা গবেষক হিসেবে কাজের সুযোগ গবেষণা সহকারী বা জুনিয়র রিসার্চ ফেলো।
- 🎓 শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ: কৃষি কলেজ বা ট্রেনিং সেন্টারে শিক্ষক বা প্রশিক্ষক পদে নিয়োগ PhD-এর পর অধ্যাপনা।
- 🏭 বেসরকারি ও শিল্পক্ষেত্র: কৃষিভিত্তিক কোম্পানি যেমন: IFFCO, Bharat Agri, Monsanto, Bayer, UPL, ITC Agri, BigBasket Farm Division সীড কোম্পানি, সার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান, ফুড প্রসেসিং ইউনিট ইত্যাদিতে চাকরি।
- 🚜 স্বনির্ভর উদ্যোগ (Agri-Entrepreneurship): নিজস্ব কৃষি উদ্যোগ বা স্টার্টআপ গড়ে তোলা (অর্গানিক ফার্মিং, হাইড্রোপনিক্স, কৃষি টেকনোলজি ইত্যাদি)।
এগ্রিকালচার শুধু চাষাবাদের বিষয় নয়, এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর পড়াশোনা যেখানে উন্নয়নের বিস্তৃত পরিসর জড়িত। যে সকল ছাত্রছাত্রীরা দেশের খাদ্য উৎপাদন ও কৃষক কল্যাণে অবদান রাখতে চায়, তাদের জন্য এগ্রিকালচার একটি অসাধারণ ক্যারিয়ার অপশন।
অবশ্যই দেখবে: Career After HS Science: উচ্চমাধ্যমিক সায়েন্স পড়ার পর কি কি অপশন আছে? সমস্ত লাইন দেখে নাও
পরবর্তী সমস্ত কিছু বিস্তারিত তথ্য আমরা তোমাদের জানিয়ে দেবো যখন এডমিশন ফরম ফিলাপ হবে কিংবা ভর্তি হবে, আর যারা ইতিমধ্যেই WBJEE প্রস্তুতি নিতে চাও, তারা প্রস্তুতি খুব ভালো করে নাও কারণ এর মাধ্যমে তোমাদের অনেক দরজা খুলে যাবে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -
আরও আপডেট »