বর্তমানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির হাত ধরে সহজতর উপায়ে জটিল থেকে জটিলতর রোগের ওষুধ বানানো নিমেষেই সম্ভব হচ্ছে, আর এই ওষুধ তৈরির কারিগর হলেন ফার্মাসিস্ট।ঔষধ বিজ্ঞান নিয়ে বিস্তারিত পড়াশুনার শাখায় হল ফার্মাসি, যা স্বাস্থ্য বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক।
উচ্চ মাধ্যমিক বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করার পর পছন্দের কেরিয়ার অপশন, মেডিকেল প্রযুক্তির সঙ্গে বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট ভাল একটি পড়াশোনার লাইন। আজকে এটা নিয়েই বিস্তারিত আমরা আলোচনা করব, কিভাবে ভর্তি হবে, পরীক্ষার মাধ্যমে যোগ্যতা সমস্ত কিছু।
How to Become a Pharmacist after 12th HS: উচ্চমাধ্যমিকের পর ফার্মাসি নিয়ে পড়াশোনা
ফার্মাসিস্ট (Pharmacist) হল এমন কেরিয়ার যেখানে ওষুধ (Medicine) তৈরি, বিপণন, সংরক্ষণ এবং রোগীদের সঠিকভাবে ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ সংক্রান্ত কাজ হয়।। যারা পড়াশোনা করেন তাদের ফার্মাসিস্ট বলা হয় এবং এই শাখা কে বলা হয় ফার্মাসি। তাঁরা মেডিকেল ল্যাবরেটরি, হাসপাতাল, মেডিকেল শপ (Medical Shop), ওষুধ কোম্পানি (Pharmaceutical Company) সহ নানা জায়গায় কাজ করতে পারেন।
একজন পেশাদারী ফার্মাসির মূল কাজ হল বিভিন্নভাবে ঔষধ প্রস্তুতিকরণ, নতুন নতুন ওষুধ রিসার্চ, ঔষধের বৈশিষ্ট্য তার প্রভাব এবং ঔষধের সঠিক ব্যবহার জানা। বর্তমানে ফার্মাসিস্ট বিভিন্ন ঔষধ বিষয়ক স্বাস্থ্য পরিষেবাও প্রদান করে থাকেন।
🎓 যোগ্যতা (Eligibility Criteria) কিভাবে ফার্মাসি পড়তে পারেন?
ফার্মাসি করতে হলে আপনাকে অবশ্যই উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান (HS 10+2 Science) নিয়ে পাঠরত হতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগের মধ্যে রসায়নবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, গণিত এবং জীববিদ্যা নিয়ে উচ্চমাধ্যমিকে ন্যূনতম 50% নাম্বার নিয়ে পাশ করতে হবে।
ফার্মাসিস্ট হওয়ার জন্য প্রাথমিকভাবে নিচের যোগ্যতা প্রয়োজন:
বিষয় | প্রয়োজনীয়তা |
---|---|
শিক্ষাগত যোগ্যতা (Educational Qualification) | উচ্চমাধ্যমিক (Higher Secondary) পাশ (10+2) – বিজ্ঞান বিভাগ (Science stream) – ফিজিক্স (Physics), কেমিস্ট্রি (Chemistry) থাকা বাধ্যতামূলক; বায়োলজি (Biology) বা গণিত (Mathematics) বা বায়োটেকনোলজি এর মধ্যে একটি থাকতে হবে |
নূন্যতম নম্বর (Minimum Marks) | উচ্চমাধ্যমিকে ওভারল ৫০% নম্বর (SC/ST-র ক্ষেত্রে ছাড় থাকে) |
বয়সসীমা (Age Limit) | সাধারণত ১৭ বছর বা তার বেশি |
🏫 Courses & Admission Details: কোন কোর্স করতে হবে? ভর্তি পরীক্ষা ও তথ্য
ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসি (D.Pharm – Diploma in Pharmacy)
ডিপ্লোমা কোর্সের সময়সীমা হলেও দুবছর এবং নূন্যতম ১৭ বছর হলেই এই কোর্সের জন্য আবেদন করতে পারেন।
- সময়কাল (Duration): ২ বছর
- যোগ্যতা: ১০+২ (বিজ্ঞান বিভাগ)
- পরীক্ষা: কলেজ/ইনস্টিটিউট অনুযায়ী ভর্তি পরীক্ষা বা মেধাতালিকা (Merit List)
ফার্মাসি ডিপ্লোমা কোর্সে ভর্তির জন্য বেশ কিছু প্রবেশিকা পরীক্ষা বা সরাসরি কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। আবার সব পশ্চিমবঙ্গে ফার্মাসি ডিপ্লোমা কোর্স করার জন্য আপনাকে WBSCTE পরিচালিত Pharmacy Entrance Test পরীক্ষায় বসতে হবে।
ব্যাচেলার ইন ইন ফার্মেসি Bachelor’s in Pharmacy (B.Pharm)
এটি একটি স্নাতক স্তরের কোর্স সময়সীমা চার বছর এবং ১৭ বছর বয়স হলেই এই কোর্সের জন্য আবেদন করা যাবে। All India council of technical education ও the pharmacy council of India কতৃক এই ডিগ্রী কোর্স নির্ধারিত হয়।
- সময়কাল: ৪ বছর (টেকনিক্যাল কোর্স)
- যোগ্যতা: ১০+২ (Physics, Chemistry, Biology/Maths সহ)
ভর্তি পদ্ধতি (Admission Process): জাতীয় স্তরে বি ফার্মে ভর্তির জন্য NEET পরীক্ষা থেকেই নেওয়া হয় এবং রাজ্যস্তরে WBJEE (Paper -2 Physics/Chemistry) নেওয়া হয়ে থাকে। WBJEE (West Bengal Joint Entrance Examination) ভালো র্যাঙ্ক করলে সরকারি ও বেসরকারি কলেজে ভর্তি হয়।
🏥 পশ্চিমবঙ্গে কোথায় পড়ার সুযোগ রয়েছে? (Top Pharmacy Colleges in West Bengal)
পশ্চিমবঙ্গে রাজ্য সরকারের অধীনে মাত্র দুটি সরকারি ফার্মাসি কলেজ রয়েছে। একটি উত্তরবঙ্গে জলপাইগুড়িতে আর একটি যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়-এর অধীনে। সরকারি কলেজে ভর্তি ফি বা অন্যান্য ফিএকেবারেই নগণ্য।
- Institute of Pharmacy, Jalpaiguri
- Jadavpur University, Department of Pharmaceutical Technology
যেহেতু সরকারি কলেজের সিট সংখ্যা খুবই সীমিত তাই ধরতে গেলে প্রতিযোগিতার দিক থেকে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীরা প্রাইভেট কলেজে নিয়ে পড়াশোনা করে, তবে ভালো Rank থাকলে স্কলারশিপ এর সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়। তবুও চার বছরে ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
- BCDA College of Pharmacy & Technology
- NSHM Knowledge Campus, Durgapur/Kolkata
- Guru Nanak Institute of Pharmaceutical Science & Technology
আরো দেখুন: Paramedical Course Details: প্যারামেডিকেল কোর্স ভর্তি? যোগ্যতা, ভর্তি পরীক্ষা, চাকরি সুবিধা দেখে নিন
💼 ফার্মাসিস্ট হওয়ার পর চাকরির ক্ষেত্র (Job Opportunities)
কোর্স কমপ্লিট করার পরে শেষ বছরে ইন্টার্নশিপ অপরচুনিটি থাকে। যেখানে প্লেসমেন্ট-এর সুবিধা সরাসরি ইন্ডাস্ট্রিতে প্রবেশ করার সুযোগ পাওয়া যায়।
ক্ষেত্র | বিস্তারিত |
---|---|
হাসপাতাল (Hospital Pharmacist) | সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল ফার্মাসি বিভাগে। |
মেডিসিন শপ (Retail Pharmacy) | নিজস্ব ওষুধের দোকান খোলা বা অন্য দোকানে কাজ। |
ফার্মা কোম্পানি (Pharmaceutical Industry) | R&D, ম্যানুফ্যাকচারিং, মার্কেটিং বিভাগে কাজ কিংবা মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসাবে সরাসরি ডাক্তারদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ। |
সরকারি চাকরি (Government Jobs) | রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর (WB Health), AIIMS, ESIC |
DRUG INSPECTOR | অতিরিক্ত যোগ্যতা ও পরীক্ষার মাধ্যমে। |
💰 প্রারম্ভিক বেতন (Starting Salary)
- D.Pharm: ₹15,000 – ₹20,000/মাস
- B.Pharm: ₹25,000 – ₹30,000/মাস (অভিজ্ঞতা বাড়লে আরও বাড়ে)
- সরকারি চাকরিতে: ₹35,000 – ₹50,000/মাস + অন্যান্য সুবিধা
🌟 ভবিষ্যৎ সুযোগ-সুবিধা (Future Scope)
- M.Pharm (মাস্টার্স), Pharm.D (Doctor of Pharmacy) করে উচ্চতর পড়াশোনা।
- বিদেশে চাকরির সুযোগ (বিশেষ করে কানাডা, UK, USA)।
- গবেষণা ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভবিষ্যৎ।
- নিজস্ব ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বা মেডিসিন ডিস্ট্রিবিউটর শুরু করা সম্ভব।
পরবর্তী দেখুন: BCA Course Eligibility, Salary: সফটওয়্যার ডেভলপার কিভাবে হবে? Computer Application সম্পূর্ণ তথ্য
একজন সফল ফার্মাসিস্ট হিসাবে ভবিষ্যতে অনেক কাজের সুযোগ থাকবে। বিশ্বের মধ্যে ঔষধের মূল্যের উপর নির্ভর করে ভারত তৃতীয় স্থান অধিকার করছে। পাশাপাশি ভারতে ৩০০০ এর বেশি ফার্মাসি কোম্পানি হয়েছে এবং ১০৫০০ এর বেশি ম্যানুফ্যাকচারিং ইউনিট রয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি বিখ্যাত কোম্পানির নাম হল – Sun pharmaceutical, Emcure, Dr. Reddy, Cipla, Mankind ইত্যাদি।
ফার্মাসিস্ট হওয়া একটি দায়িত্বপূর্ণ এবং সম্মানজনক পেশা। আপনি যদি জীববিজ্ঞান বা রসায়ন ভালোবাসেন এবং চিকিৎসা পরিষেবায় কাজ করতে চান, তবে এটি আপনার জন্য আদর্শ কেরিয়ার হতে পারে। পশ্চিমবঙ্গ সহ গোটা ভারতে এই পেশার চাহিদা ক্রমবর্ধমান।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম গ্রুপে যুক্ত হোন -
আরও আপডেট »