যেকোনো বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য বিজ্ঞান বিষয়ক থেকে যে প্রবন্ধ রচনা বাংলাতে আছে, তার মধ্যে ‘বিজ্ঞান ও কুসংস্কার‘ যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এবং গত বছরগুলির প্রশ্ন এনালাইসিস করলেও দেখা যাবে, এই সম্পর্কিত রচনা প্রায় এসেই থাকে। সেই দিকে নজর রেখে এই বছরের জন্য এই রচনাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ তোমাদের জন্য – আজকে সম্পূর্ণ রচনাটি সহজ বাংলাতে পয়েন্ট করে করে শেয়ার করা হলো।
বিজ্ঞান বনাম কুসংস্কার বাংলা প্রবন্ধ রচনা
❝মেনে যত বাঁধা টিকটিকি হাঁচি,
বাঁচিতে বাঁচিতে প্রায় মরিয়াছি।❞
ভুমিকা :—
যে জাতি জীবনহারা, অচল, অসার সেই জাতীর যুক্তি বিচারের স্রোত পথ তুচ্ছ, আচারের শুষ্ক মরু বালুকারাশিতে হারিয়ে যায়। টিকটিকির ডাক, হাঁচির শব্দে থমকে যায় তার অগ্রগতি। সেই জাতি জীবন্মৃত, তার প্রান শক্তি স্তিমিত। ভারতবর্ষের এখন সেই অবস্থা স্বাধীনতার এত বছর বাদেও “পদে পদে বাঁধে তারে জীর্ণ লোকাচার”। এই কুসংস্কারকে পরাস্ত করাতে পারে একমাত্র বিজ্ঞান মনষ্ক চিন্তধারার প্রসার।
কুসংস্কার কী? ~~ সভ্যতাকে যাচাই না করে অন্ধবিশ্বাস, যুক্তিবোধহীন মিথ্যা ধারনার বশবর্তী হওয়াকে বলে বেডাংষ্কার। ইংরেজি ‘Superstition’ এর বাংলা প্রতিশব্দ কুসংস্কার, কুসংস্কারের মূল কারন হল অজ্ঞতা ও অনুবিশ্বাস। বিজ্ঞান নির্ভর যুগেও অশিক্ষিত, স্বল্প শিক্ষিত এমনকি শিক্ষিত মানুষও রোগ ও ব্যাধি থেকে আরোগ্য পেতে মন্ত্র-তন্ত্র, ঝাঁড়-ফুঁক করে। ডাইনি, জিন, ভূত-প্রেত সন্দেহ করে माনুষ মানুষকে হত্যা করে।
বিজ্ঞান ও কুসংস্কার :—
বিজ্ঞান হল এমন জ্ঞান যা পরিক্ষিত সত্য। যা মানুষের কল্যানের জন্যই কাজে লাগে। আর কুসংস্কার মূলত কতকগুলি অন্ধবিশ্বাস, যা মানুষের অমঙ্গল করে, মানুষকে সংস্কারের সংকীর্ণ বেড়াজাল থেকে মুক্তি করার জন্য বিজ্ঞান নানা প্রচারাভিয়ান গড়ে তুলেছে। মানুষের সংস্কার মুক্তির জন্য গান চেতনা ও সুশিক্ষা বৃদ্ধি হল এই আনুগত্য থেকে মুক্তি পাওয়ার অন্যতম পথ। সুশিক্ষাই মানুষকে আত্মনির্ভর করে তোলায় বিজ্ঞানের লক্ষ্য। একমাত্র বিজ্ঞানই পারে মানুষকে কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করতে। তাই আমাদের বলতে হবে–
❝বিজ্ঞানের টোপর পরে আমরা হব শক্তিমান
অশুভকে পায়ে ঠেলে, শুভকে করি প্রনাম।❞
কুসংস্কারের উৎপত্তি :—
আদিম মানুষ পাহাড়ে এবং জঙ্গলে থাকত, তখন বিজ্ঞানের জন্ম হয়নি। তখন মানুষ অতিপ্রাকৃত সত্তায় বিশ্বাস করত। যে-কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপর্যয়ের মূলে দৈবের হাত আছে বলে তারা মনে করত। রোগশোকের মূলেও অপশক্তি অথবা দেবতাদের রোষ, ভূতপ্রেত প্রভৃতি অশরীরী আত্মার কারসাজি আছে বলে তারা মনে করত। এভাবে জীবনের চলার পথের যত কিছু বাধাবিঘ্ন, বিপদ সংকেত, শুভ-অশুভ, রোগ-নিরোগ সবকিছুর মূলে কোনো না কোনো দেবতা আছে বলে তারা মনে করত।
অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি :—
বিজ্ঞানচেতনা দিনের পর দিন প্রসারিত হয়েছে ঠিকই, কিন্তু মানুষ আজও অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেনি। বিজ্ঞানের সঙ্গে ধর্মীয় ভাবাবেগের সংঘাত একটা নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীবন থেকে অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারকে দূর করতে হলে তথ্য ও তত্ত্বকে চোখ বুজে গ্রহন না করে যুক্তি ও বিচারের কষ্টি পাথরে মূল্যায়ন করতে হবে। সত্যান্বেষী মনোভাবই অন্ধবিশ্বাস থেকে মুক্তির যথার্থ পথ l
অন্ধবিশ্বাস ও কুসংস্কারের স্বরুপ :—
বিজ্ঞানচেতনা ও কুসংস্কার দু’য়ের অবস্থান বিপরীতমুখী। বিজ্ঞানের প্রভৃত উন্নতির করলেও নিরীহ নারীকে ডাইনি বলে অমানবিকভাবে হত্যা করা হচ্ছে। বিজ্ঞানের যুগে সতীদাহ-সহমরন, মাদুলি-তাবিজ-কবচ ইত্যাদি ধর্মীয় ব্যাধির অস্তিত্ব দেখা যাচ্ছে। প্যাঁচার ডাককে মানুষ আজও অশুভ বলে, খাবার টেবিলে এখনো মানুষ তিন, তেরো, সতেরো জন একসঙ্গে বসে খেতে দ্বিধাবোধ করে। বিজ্ঞানি আইনস্টাইন কুসংস্কারের উৎস হিসেবে ভয় ও আতঙ্কের কথা বলেছেন। তিনি লিখেছেন—
"It is this undefined source of fear and hope with is the genesis of irrational superstition."
সামাজিক কুসংস্কারের প্রাবল্য :—
বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সত্ত্বেও ভারতবর্ষের মতো অজস্র দেশ আজও কুসংস্কারের সংকীর্ণ খাতে আবদ্ধ। সামাজিক কুসংস্কারগুলি যেমন– শিশু হত্যা, ডাইনি হত্যা এসব দেশে প্রায়শই ঘটছে। এসব ঘটনার থেকেও বেশি কুরুচিকর ও লজ্জাজনক ধর্মীয় কুসংস্কার ১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দে ২১ সেপ্টেম্বর গনেশমূর্তির দুধপান, পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায় এই সংস্কারকে পৃষ্ঠটান বলা হয়। দৈব-অলৌকিকতাকে কেন্দ্র করে মানুষ হিংসাত্মাকেভাবে মজে ওঠে।
শিক্ষিত মানুষের কুসংষ্কার :—
শিক্ষার আলোয় আলোকিত হয়েও মানুষ কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে পারেনি। বৈজ্ঞানিক মানুষ হয়েও তাবিজ-মাদুলি-কবচ দেখা যায়। ডাক্তার ব্যক্তিও চিকিৎসাবিদ্যার পাশাপাশি জ্যোতিষ বিদ্যার ওপর আস্থা রাখে। বহু শিক্ষিত লোক রোগ থেকে আরোগ্য পেতে সাধু-মৌলবীদের ‘ডালপড়া’, ‘চিনিপড়া’ খান চোখ বুজে। প্রকৃত শিক্ষার অভাবের ফলে এই কুসংস্কারগুলি ক্রমেই বেড়ে চলেছে। অজ্ঞতা ও ভীরুতা এই কুসংস্কারের প্রানকেন্দ্র, একমাত্র যুক্তিনিষ্ঠ শিক্ষা এই সমস্ত কুসংস্কারকে দূর করতে পারে।
কুসংস্কার দুরীকরনে ছাত্রসমাজ :—
কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে ছাত্রসমাজ, ছাত্ররাই পারে কুসংস্কারের জগৎদল পাথরটাকে সমাজের মানুষের জীবন থেকে সরিয়ে দিতে। তার থেকেও বড়ো কথা হল কুসংস্কার থেকে মুক্ত হতে হলে সবার আগে শিক্ষার প্রসার প্রয়োজন। শিক্ষা আনার চেতনা আনবে মুক্তি-কুসংস্কারের হাত থেকে মুক্তি।
উপসংহার :—
একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় ধাপে দাঁড়িয়ে মানুষকে আরো বেশি করে Super Science হতে হবে। এখনও আমরা সেই আদিকালের প্রথা, আচার, সংস্কারকে আঁকড়ে ধরে থাকবো? কেন বিজ্ঞানের হাত ধরে চলব না? এসো মুক্ত করো, মুক্ত করো এই দ্বার। কুসংস্কারের হাত ধরে পৃথিবীতে ঢের জন্ম নষ্ট হয়ে গেছে। কেবল বিজ্ঞান চেতনায় পারে সংস্কারের অমানবিকতা ভেদ করে আলোকতীর্থে নিয়ে যেতে। তবেই আমরা সুদিনের মুখ দেখতে পাব। আর কবির কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে বলব–
❝ধর্মকারার প্রাচীরে বজ্র হানো,
এ অভাগা দেশে জ্ঞানের আলো আনো।❞
আরো প্রবন্ধ রচনা অবশ্যই দেখবে:
আশা করি উপরে তথ্যগুলো এবং পয়েন্টগুলো সহজে তোমরা বুঝতে পেরেছ, এখনো যদি কোন প্রশ্ন থাকে তাহলে তোমরা নিচে কমেন্ট করে সেটা জিজ্ঞাসা করতে পারো।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -