রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশের জীবনী প্রবন্ধ রচনা হিসেবে আজকে তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হলো। মাধ্যমিকের ক্ষেত্রেও একটি যতটাই গুরুত্বপূর্ণ একইভাবে উচ্চমাধ্যমিকে, তবে উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে তোমাদের তথ্য দেয়া থাকবে, তো সেক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তোমাদের সেগুলি মনে রাখলে বেশি সুবিধা হবে।
রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ
ভূমিকা :–
“প্রেম ধীরে ধীরে মুছে যায়, নক্ষত্রেরও একদিন মরে যেতে হয়, হয় নাকি?”
বাংলা সাহিত্যের আকাশে এক উজ্জ্বল তারা হিসেবে জ্বলজ্বলে আলো জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক৷ তিনি বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের মধ্যে অন্যতম৷ তার কবিতায় পরাবাস্তবের দেখা মেলে৷ তাঁর জীবন এবং সাহিত্যের মধ্যে এক অদ্ভুত সম্পর্ক ছিল, যা তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
জন্ম ও বংশ পরিচয় :–
১৮৯৯ সালের ১৭ই ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন জীবনানন্দ দাশ (তার একটি ডাক নাম ছিল মিলু)। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন একজন শিক্ষক এবং ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার সম্পাদক। তাঁর মাতা কুসুমকুমারী দেবী -ও ছিলেন মহিলা কবি (কুসুমকুমারী দেবী রচিত একটি বিখ্যাত কবি “আদর্শ ছেলে”, যার প্রথম চরণ “আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড় হবে“)। জীবনানন্দের পূর্বপুরুষগণ ঢাকার বিক্রমপুর অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। তাঁর পরিবারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ছিল। এই পরিবেশই জীবনানন্দকে সাহিত্যের দিকে আকৃষ্ট করে।
শিক্ষাজীবন :–
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন একজন মেধাবী ছাত্র। ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে জীবনানন্দ বরিশালের ব্রজমোহন বিদ্যালয়ে একেবারে পঞ্চম শ্রেণীে ভর্তি হন। ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বরিশাল ব্রজমোহন কলেজ থেকে আইএ পাস করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে ভর্তি হন এবং সেখান থেকে ১৯১৯ খ্রী. ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করে জীবনানন্দ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভরতি হন। ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে এখান থেকেই ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স নিয়ে তিনি স্নাতক ডিগ্রি (এমএ) অর্জন করেন। শিক্ষাজীবন থেকেই তাঁর মধ্যে সাহিত্যচর্চার প্রতি গভীর আগ্রহ দেখা যায়।
কর্মজীবন :–
স্নাতকোত্তরের পরের বছরই ১৯২২ খ্রী. কলকাতার সিটি কলেজে অধ্যাপনার কাজে নিযুক্ত হন। কিন্তু এই চাকরি তার দীর্ঘস্থায়ী হননি। এরপর খুলনায় বাগেরহাট কলেজে এবং পরে দিল্লির রামমজ কলেজে অধ্যাপনা করেন তিনি। তারপর তিনি কিছুদিন কর্মহীন হয়ে থাকেন এবং পড়ে বরিশালে সহজমোহন কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগদান করেন। এরপর কয়েক দশকের মধ্যে তিনি সপরিবার নিয়ে কলকাতা আসার উদ্যোগ নেয়। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে তিনি খড়্গপুর কলেজে অধ্যাপনার কাজে যোগদেন। এবং পড়ে বরিষা কলেজে এবং সেখান থেকে হাওড়ার গার্লস কলেজে অধ্যাপনার কাজে দীর্ঘস্থায়ীভাবে যোগ দেন।
সাহিত্য কর্ম:–
ছাত্রজীবন থেকেই জীবনানন্দ দাশ লেখালিখি শুরু করেন। তাঁর প্রথম কবিতা ‘বর্ষ আবাহন’ সত্যানন্দ সম্পাদিত ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ১৯২৪-২৫ সাল থেকে তিনি নিয়মিত লেখা শুরু করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘ঝরা পালক’ ১৯২৭ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর তিনি ‘ধূসর পাণ্ডুলিপি’ (১৯৩৬), ‘বনলতা সেন’ (১৯৪২), ‘মহাপৃথিবী’ (১৯৪৪), ‘সাতটি তারার তিমির’ (১৯৪৮), ‘রূপসী বাংলা’ (১৯৫৭) ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থ রচনা করেন।
জীবনানন্দ দাশ কবিতার পাশাপাশি বহু গল্প-উপন্যাস রচনা করেনা, কিন্তু সেগুলি লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে। এখন সেগুলি প্রকাশিত হওয়ার ফলে তাঁর সম্পর্কে নতুন চিন্তাভাবনা শুরু হয়েছে। তাঁর উপন্যাসগুলি হল– “জলপাইহাটি”, “সুতীর্থ”, “কারুবাসনা” ইত্যাদি। তাঁর লেখা অনেক ছোটগল্প আছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গল্পটি হল ‘কবিতার কথা’।
তিনি বাংলার কথা উল্লেখ করে বলেছেন– “বাংলার মুখ আমি দেখিয়াছি, তাই আমি পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর।”
সাহিত্যে অবদান :–
জীবনানন্দ দাশের কবিতা শুধু একটি কবিতা নয়, এটি জীবনের অর্থ খোঁজার এক অবিরাম যাত্রা। তাঁর কবিতায় প্রকৃতি, মানুষ, সময়, মৃত্যু ব্যক্তিবাদ, অস্তিত্ববাদ, মৃত্যু – সবকিছুই এক অদ্ভুত সমন্বয়ে মিশে আছে। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এক অনন্য বর্ণনা পাওয়া যায়। কলকাতার জীবন, নগরের কোলাহল, মানুষের সংগ্রাম – সবকিছুই তাঁর কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে।
প্রকৃতি: তিনি প্রকৃতিকে এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে দেখতেন। তাঁর কবিতায় প্রকৃতির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কের এক অনন্য বর্ণনা পাওয়া যায়। “ঝরা পালক” কাব্যগ্রন্থে তিনি প্রকৃতির বিভিন্ন রূপের বর্ণনা করেছেন।
একাকিত্ব: তাঁর কবিতায় একাকিত্বের গভীর অনুভূতি প্রকাশ পেয়েছে। “বনলতা সেন” কবিতায় তিনি একাকিত্বের বেদনা বর্ণনা করেছেন।
সময়: তিনি সময়কে এক অবিরাম প্রবাহ হিসেবে দেখতেন। “পৃথিবী ও সময়” কবিতায় তিনি সময়ের গতি এবং মানুষের জীবনের সঙ্গে সময়ের সম্পর্কের বর্ণনা করেছেন।
অস্তিত্ববাদ: তাঁর কবিতায় অস্তিত্ববাদের প্রশ্নগুলি উঠে এসেছে। তিনি মানুষের অস্তিত্বের অর্থ এবং জীবনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে প্রশ্ন করেছেন।
অন্তিম পরিনয়:–
কবি জীবনানন্দ দাশের মৃত্যু হয় ১৯৫৪ সালের ২২ অক্টোবর। তিনি কলকাতার একটি ট্রাম দুর্ঘটনায় মারা যান। কবি যখন রাস্তা পার হচ্ছিলেন, তখন একটি ট্রাম তাকে ধাক্কা দেয়। এই দুর্ঘটনায় তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায় এবং তিনি গুরুতর আহত হন। আট দিনের অসুস্থতার পর তিনি মারা যান।
পুরস্কার :–
১৯৫২ সালে তাঁর কাব্যগ্রন্থ “বনলতা সেন” নিখিলবঙ্গ রবীন্দ্রসাহিত্য সম্মেলনের পুরস্কার পায়। এবং ১৯৫৫ সালে তাঁর মৃত্যুর পর, ❝জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা❞ (১৯৫৪) গ্রন্থটি সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করে। এই পুরস্কারটি ভারত সরকারের সর্বোচ্চ সাহিত্যিক সম্মান।
জীবনানন্দ দাশের প্রভাব :–
জীবনানন্দ দাশের কবিতা বাংলা সাহিত্যে এক নতুন যুগের সূচনা করেছিল। তাঁর কবিতা অনেক নতুন প্রজন্মের কবিদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি বাংলা কবিতাকে আধুনিকতার দিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন। তাঁর কবিতা আজও তরুণ প্রজন্মের কাছে জনপ্রিয়।
উপসংহার :–
জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের এক মহান কবি, এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন দার্শনিক, একজন চিন্তক। তাঁর কবিতা জীবনের গভীর অনুভূতি, অস্তিত্বের সংকট, প্রেম ও বিরহের এক গভীরতম সত্যকে উন্মোচন করে। মৃত্যুর পর থেকে শুরু করে বিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে তিনি জনপ্রিয়তা পেতে শুরু করেন এবং ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে যখন তার জন্মশতবার্ষিকী পালিত হচ্ছিল, ততদিনে তিনি বাংলা সাহিত্যের অন্যতম জনপ্রিয় কবিতে পরিণত হয়েছেন। আজও তাঁর কবিতা আমাদেরকে জীবন সম্পর্কে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে।
এক্ষেত্রে বিশেষভাবে বলা দরকার পয়েন্ট করে লেখার পাশাপাশি যে কবিতা, কাব্যগ্রন্থ বা সাহিত্য সমগ্র রয়েছে সেগুলি সব সময় ডাবল কোটেশনের (” ”) মধ্যে রাখবে। পারলে অন্য কালিতে লিখবে। উপস্থাপনটাই মূল বিষয়, সকলে একই রকম তথ্য লিখলে তুমি অন্যের থেকে বাড়তি সুবিধা কি করে পাবে? – নিজের ভাষায় নিজের মতো করে প্রেজেন্ট করলে অধিক নম্বর তুলতে পারবে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -