নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব। ১৯ অক্টোবর, ২০২৪ -এ তার জন্মের ১০০ বছর সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই শতবর্ষের আলোকে সাহিত্যিক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জীবনী প্রবন্ধ রচনা হিসেবে আজকের তোমাদের সঙ্গে শেয়ার করা হলো। নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক, একাদশ শ্রেণীর দ্বিতীয় সেমিস্টারে এবং উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে এই রচনাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টার ও উচ্চমাধ্যমিকের ক্ষেত্রে প্রবন্ধ রচনা লেখার জন্য প্রশ্নের মধ্যেই অনেক তথ্য দেওয়া থাকবে, তো সেক্ষেত্রে অনেকটাই সুবিধা হবে। কিন্তু তোমরা যদি এটা মুখস্ত বা মোটামুটি একটু পড়া থাকে তাহলে তোমাদের লিখতে অনেকটাই সুবিধা হবে।
শতবর্ষের আলোকে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী
ভূমিকা :–
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাংলা সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। বিংশ শতাব্দীর বাংলা সাহিত্যের আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো জ্বলজ্বল করতেন তিনি। তাঁর কবিতায় ছিল বিদ্রূপ, ব্যঙ্গ, প্রতিবাদ, আবার ছিল স্বপ্ন ও আশা, সময়ের প্রতিধ্বনি, সমাজের বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁর জীবন এবং সাহিত্যকর্ম একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে বাংলা সাহিত্যের এক সময়কালের ছবি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শতবর্ষ পেরিয়েও তাঁর কবিতা আজও তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করে।
তার লেখা- "ও পাখি, তুই কেমন আছিস, ভাল কি?, এই তোমাদের জিজ্ঞাসাটাই মস্ত একটা চালাকি।" -এই উক্তিটি অনেকের মনেই গেঁথে আছে।
জন্ম ও বংশ পরিচয় :–
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৪ সালের ১৯ অক্টোবর, বর্তমান বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলার চান্দা গ্রামে। তাঁর শৈশব কেটেছে গ্রামের সাদামাটা পরিবেশে। তাঁর পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কলকাতায় একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে কাজ করতেন, এছাড়াও তিনি ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের বিশিষ্ট অনুরাগী এবং মাতা ছিলেন প্রফুল্ল নন্দিনী দেবী। নীরেন্দ্রনাথের দুই বছর বয়সে তাঁর মা বাবার কর্মস্থল কলকাতায় চলে যান এবং তিনি গ্রামে তার ঠাকুরদা লোকনাথ চক্রবর্তীর কাছেই থেকে যান।
শিক্ষাজীবন :–
নীরেন্দ্রনাথের প্রাথমিক লেখাপড়া ফরিদপুরের পাঠশালায়। পরে ঠাকুরদার মৃত্যুর পর গ্রাম ছেড়ে ১৯৩০ সালে কলকাতায় চলে এসেছিলেন। কলকাতায় এসে প্রথমে কলকাতার বঙ্গবাসী স্কুলে এবং পরে মিত্র ইনস্টিটিউশনে ভর্তি হন। ১৯৪০ খ্রিস্টাব্দে “প্রবেশিকা পরীক্ষা“য় উত্তীর্ণ হন। ১৯৪২ খ্রিস্টাব্দে বঙ্গবাসী কলেজ থেকে আই. এ. পাশ করেন। ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে সেন্ট পলস্ কলেজ থেকে ইতিহাসে অনার্স নিয়ে বি. এ. পাশ করেন। ছাত্রাবস্থায় “শ্রীহর্ষ” পত্রিকার সম্পাদনা করে সংবাদপত্রের প্রতি তাঁর নিবিড় ও গভীর অনুরাগের সূত্রপাত হয়।
কর্মজীবন :–
সাহিত্যের পাশাপাশি সাংবাদিকতাও ছিল তাঁর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ষোল বছর বয়সেই “শ্রীহর্ষ” পত্রিকায় কবিতা প্রকাশ করে তিনি সাহিত্য জগতে পা রাখেন। এরপর “দৈনিক প্রত্যহ” পত্রিকায় তিনি সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি “সত্যযুগ“, “মাতৃভূমি“, “স্বরাজ“, “ভারত“, “ইউনাইটেড প্রেস অফ ইন্ডিয়া” সহ আরও অনেক পত্রিকায় কাজ করেন। ১৯৫১ সাল থেকে তিনি “আনন্দবাজার পত্রিকা“য় যুক্ত হন এবং দীর্ঘদিন “আনন্দমেলা” পত্রিকার সম্পাদনা করেন। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “নীল নির্জন” ১৯৫৪ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর “অন্ধকার বারান্দা“, “নীরক্ত করবী“, “নক্ষত্র জয়ের জন্য“, “আজ সকালে” সহ আরও অনেক কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন।
লেখালিখি :–
কবির চার বছর বয়সে তাঁর কথা বলার ভাব দেখে তাঁর কাকিমা বলেছিলেন,- ’তুই তো দেখছি কবিদের মতোন কথা বলছিস!’ নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী মাত্র পাঁচ বছর বয়সে কবিতা লেখা শুরু করলেও, সেগুলি প্রকাশিত হয়নি। তবে, ষোল বছর বয়স থেকে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় কবিতা লিখতে শুরু করেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য একটি কাব্যগ্রন্থ “উলঙ্গ রাজা”-এর গুরুত্বপূর্ণ চরণ হল-
"যাও, তাকে যেমন করেই হোক
খুঁজে আনো।
সে এসে একবার এই উলঙ্গ রাজার সামনে
নির্ভয়ে দাঁড়াক।
সে এসে একবার এই হাততালির ঊর্ধ্বে গলা তুলে
জিজ্ঞাসা করুক :
রাজা, তোর কাপড় কোথায়?"
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর লেখালিখির মূল বিষয়বস্তু ছিল সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, শোষণ, অবিচার। তাঁর কবিতায় ছিল তীব্র প্রতিবাদী সুর।তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘নীল নির্জন‘ প্রকাশ পায় ১৯৫৪ সালে। সেই শুরু, একে একে প্রকাশ পেতে থাকে ‘অন্ধকার বারান্দা‘, ‘সময় বড় কম’, ‘ঘুমিয়ে পড়ার আগে‘, ‘আজ সকালে‘। নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কবিতা ছাড়াও একাধিক গল্প ও উপন্যাস লিখেছেন। যেমন– “শ্যামনিবাস রহস্য” (১৯৯০), “চশমার আড়ালে” (১৯৯৩), “রাত তখন তিনটে” (১৯৯৪), “আংটি রহস্য” (২০০০), “শান্তিলতার অশান্তি” (২০০২),“কামিনীর কণ্ঠহার” (২০০৩) প্রভৃতি। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যে তার সৃষ্ট গোয়েন্দা চরিত্রের নাম ভাদুড়ী মশাই।
পুরস্কার :–
কবি নীরেন্দ্রনাথ তাঁর ‘উলঙ্গ রাজা’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৭৪ সালে ‘সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার‘ পান। ১৯৫৮ সালে ‘উল্টোরথ পুরস্কার‘, ১৯৭০ সালে ‘তারাশঙ্কর স্মৃতি‘ ও ১৯৭৬ সালে ‘আনন্দ শিরোমণি’ পুরস্কার পান কবি। ২০০৭ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সাম্মানিক ডি. লিট প্রদান করে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে বঙ্গবিভূষণ পুরস্কার দিয়ে সম্মানিত করেছিল। তাছাড়াও তিনি অনেক পুরস্কার লাভ করেছেন।
জীবনাবসান :–
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, বাংলা সাহিত্যের একজন প্রতিভাবান কবি, ২০১৮ সালের ২৫শে ডিসেম্বর কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন তিনি। ৯৪ বছর বয়সে এই বিশিষ্ট কবির মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগতের এক অধ্যায়ের সমাপ্তি ঘটে।
তাঁর বন্ধু রমাপদ চৌধুরীর মৃত্যুতে শোকে বিহ্বল নীরেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন, 'আমারও আর দেরি নেই। রমাপদকে বেশি দিন একা থাকতে হবে না। ও খুব শিগগিরই কথা বলার লোক পেয়ে যাবে।'
উপসংহার :–
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বাংলা সাহিত্যের আধুনিক যুগের অন্যতম প্রভাবশালী কবি। তাঁর কবিতাগুলি ছিল সমাজের বাস্তবতার প্রতিফলন। তাঁর কবিতা আজও আমাদেরকে অনুপ্রাণিত করে। তাঁর কবিতা আমাদেরকে সমাজের বাস্তবতাকে দেখার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। তাঁর মৃত্যু হলেও তাঁর কবিতা চিরকাল বাঁচবে। তাঁর জীবন এবং সাহিত্যকর্ম বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা।
কোনো একটি লেখক, কবি বা সাহিত্যিক এর জীবনী লেখার ক্ষেত্রে তোমাদের বিশেষভাবে মাথায় রাখতে হবে যে- পয়েন্ট করে লেখার পাশাপাশি তাঁর লেখা কবিতা বা গল্পের নাম বা কাব্যগ্রন্থের নাম এবং তাঁর পাওয়া বিভিন্ন পুরস্কারের নামগুলিকে ডাবল কোটেশনের (” ”) মধ্যে লেখা। পারলে অন্য কালিতে মোটা করে লেখা। এতে এই জিনিসগুলি খুব ভালোভাবে চোখে পড়বে যাতে যিনি খাতা দেখবেন তিনিও অনেকটা সন্তুষ্টি বোধ করবেন।
আর প্রবন্ধ রচনা লেখার ক্ষেত্রে উপস্থাপনটাই মূল বিষয়, তাই একটি রচনাকে স্যাম্পেল হিসেবে দেখে সেটিকে নিজের ভাষাতে পরীক্ষার খাতাতে লিখতে পারলে নিজের মতো করে প্রেজেন্ট করলে অধিক নম্বর তুলতে পারবে। কারণ, সকলে একই রকম তথ্য লিখলে তুমি অন্যের থেকে বাড়তি সুবিধা কি করে পাবে? – সুতরাং, নিজের ভাষায় লেখার চেষ্টা করবে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -