উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা প্রথম ভাষা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হল কবি-সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের তেলেনাপোতা আবিষ্কার। সিলেবাসের প্রশ্ন অনুযায়ী এখান থেকে শুধুমাত্র বড় প্রশ্ন বা রচনাধর্মী প্রশ্ন আসবে।
আজকের ক্লাসে একাদশ শ্রেণি 2nd Semester “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” তাই সমস্ত বড় প্রশ্নের নোট তোমাদের সাথে শেয়ার করা হলো। এখান থেকে গুরুত্বপূর্ণ সমস্ত প্রশ্ন তুলে ধরা রয়েছে এবং সেগুলি কিভাবে উত্তর লিখলে তোমরা সম্পূর্ণ নম্বর পেতে পারো সেই গাইডও করা রয়েছে।
⏺️ তেলেনাপোতা আবিষ্কার বড় প্রশ্ন উত্তর | একাদশ শ্রেণি 2nd Semester WBCHSE রচনাধর্মী প্রশ্নোত্তর: (প্রশ্নমান – ৫)
'তেলেনাপোতা আবিষ্কার' - কবি-সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্র
❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পে নায়ক ও তার দুই সঙ্গীর গোরুর গাড়িতে করে যাত্রার অভিনব অভিজ্ঞতার বর্ণনার দাও।
উত্তর 👉🏻 প্রেমেন্দ্র মিত্রের “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পটি এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার বর্ণনা। ভাদ্র মাসে একটি বিকেলের পড়ন্ত রোদে কথক ও তার দুই সংগী তেলেনাপোতা উদ্দেশ্যে রওনার জন্য প্রথমে ভিড়ে ঠাসা একটি বাসে ওঠেন, তারপর ঘন্টা দুয়েক বাসে যাওয়ার পরে জনমানবহীন একটি জঙ্গলেরধারে রাস্তার মধ্যে আচমকা নেমে পড়েন। আর সেই জঙ্গলের মধ্যে কিছুক্ষণের মধ্যেই অন্ধকার নেমে আসে আর কথকরা সেখানে নালার দিকে চেয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর যখন কথক ও তার বন্ধুরা আবার বড় রাস্তার ধারে বাসে উঠে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করেন ঠিক তখনই হঠাৎ করে জঙ্গলের মধ্যে থেকে অপরূপ একটি শ্রুতিবিস্ময়কর আওয়াজ শুনতে পাবেন যেটাকে শুনে মনে হবে– ❝বোবা জঙ্গল থেকে কে যেন অমানুষিক এক কান্না নিংড়ে নিংড়ে বার করছে।❞ এই শব্দ শুনে কিছুক্ষণ প্রতীক্ষা করার পর সেখানে একটি গরুর গাড়ি আসতে দেখতে পান কথক ও তার বন্ধুরা।
☆ গোরুর গাড়ির বর্ণনা :– গল্পে গোরুর গাড়িটির আবির্ভাব একটি অদ্ভুত এবং রহস্যময় ঘটনা। ❝আবছা অন্ধকারে প্রথমে একটি ক্ষীণ আলো দুলতে দেখা যাবে ও তারপর একটি গোরুর গাড়ি জঙ্গলের ভেতর থেকে নালা দিয়ে ধীর মন্থর দোদুল্যমান গতিতে বেরিয়ে আসবে। যেমন গাড়িটি তেমনি গরুগুলো—মনে হবে পাতালের কোনো বামনের দেশ থেকে গরুর গাড়ির এই সংক্ষিপ্ত সংস্করণটি বেরিয়ে এসেছে।❞ – অর্থাৎ সেই অন্ধকারে কথকরা যে গরুর গাড়িটি দেখেছিল সেই গরুর গাড়িতে একটি ক্ষীণ আলো ছিল। এই গরুর গাড়ির গোরু এবং গাড়িটি এতটাই ছোট ছিল যে এটাকে দেখে কথকের মনে হয়েছিল কোনো বামনের দেশ থেকে এই গরুর গাড়িটি এসেছে।
গাড়ির ছোট আকার এবং ধীর গতি তার রহস্যময়তা আরও বাড়িয়ে দেয়। কথক ও তার সঙ্গীরা পিতা বাক্য ব্যয় না করে এই গাড়িতে চড়ে এক অজানা পথে যাত্রা করে। গাড়ির ভেতরে তিন বন্ধুর হাত-পা ও মাথা যথোচিত স্থানে সংস্থাপিত হওয়ায় তাদের অবস্থা খুবই অস্বস্তিকর ছিল।
তারা কীভাবে তিনজন একসঙ্গে ছোট্ট গাড়িতে জায়গা করবে, সাথে তাদের সমস্ত জিনিসপত্রকে কিভাবে সেই ছোট্ট গাড়ির মধ্যে সংস্থাপিত করবে সেই সমস্যা নিয়ে তারা ভাবছিল। এইভাবেই তারা কোনোরকম ভাবে সেই গরুর গাড়িতে করে তেলেনাপোতার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। রাস্তায় যেতে যেতে মাঝপথে বাঘ তাড়ানোর জন্য গাড়োয়ান ক্যানেস্তারা বাজাতে থাকে আর কিছুক্ষণ পরে একটি বিশাল মাঠ পার হয়ে দু-তিনটি মোর বেঁকে গোরুর গাড়ি একটি জায়গায় গিয়ে থামবে যেই জায়গাটির নামই তেলেনাপোতা।
❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পে মাছ ধরার সময় পুকুরঘাটের ঘটনাটির বর্ণনা দাও।
উত্তর 👉🏻 প্রখ্যাত কবি সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পে কথক বা নায়কের তেলেনাপোতা যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিল মাছ ধরা। গল্পের একটা অংশে আমরা দেখতে পাই, গল্পের নায়ক একদিন (অর্থাৎ যেদিন তারা তেলেনাপোতায় পৌঁছেছিল তারপরের দিন) সকালে মাছ ধরার জন্য শ্যাওলা ঢাকা ভাঙা ঘাটের একটি ধারে বসে গুঁড়ি-পানায় সবুজ জলের মধ্যে বড়শিতে চারা দিয়ে পুকুরে বড়শি নামায়। বেলা বাড়তে থাকে এবং অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পরও কোনো মাছ ধরতে পারে না।
পুকুরের পাশে বসে নায়ক চিন্তিত। মাছরাঙা ওপারের ঝুঁকে পোড়া একটা বাঁশের ডগাতে বসে তার উপর বিদ্রূপ করে এবং মাঝে মাঝে পুকুরে জলে ঝাঁপিয়ে পড়ে, হঠাৎ একটা মোটা লম্বা সাপ ভাঙা ঘাটের কোন ফাটল থেকে বেরিয়ে ধীর গতিতে পুকুর পার হয়ে যায়, দুটো ফড়িং নিজেদের মধ্যে পাল্লা দিয়ে বড়শির ফাতনাটায় বসতে চায় এবং ঘুঘুর ডাকে সে আনমনা হয়ে যায়। এই সব প্রাকৃতিক ঘটনা নায়কের মনের বিভিন্ন ভাবকে প্রতিফলিত করে। প্রকৃতির এই নিরব সাক্ষী হয়ে সে নিজেকে একাকী ও অসহায় মনে করছে।
তারপরে সেখানে হঠাৎ এক যুবতী মেয়ে জল আনতে আসে। পিতলের ঝকঝকে কলশি নিয়ে পুকুরের পানা ঢেউ দিয়ে সরিয়ে জল ভরে এবং সে নায়ক এবং তার বড়শির ফতনার দিকে তাকিয়ে জল ভরা কলশি কোমরে তুলে নিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ নায়কে বলে ওঠে ❝বসে আছেন কেন? টান দিন।❞ মেয়েটির শান্ত মধুর ও গভীর কন্ঠ নায়ককে মুগ্ধ করে তোলে এবং কথক এমনই বিহ্বল হয়ে যায় যে সে ছিপ তুলতে ভুলে যায়। তারপরে ডুবে যাওয়া ফতনা আবার ভেসে উঠবার পর ছিপ তুলে দেখে যে বড়শিতে আর টোপ নেই। মেয়েটির সাথে এই সামান্য আলাপচারিতা নায়কের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
পুকুর ঘাটের নির্জনতা ভঙ্গ না হওয়াই বিরক্ত হয়ে নায়ক আর দ্বিতীয়বার মাছ ধরার চেষ্টা করেননি। শেষপর্যন্ত ওই মেয়েটির কথা ভাবতে ভাবতে একসময় পুকুরঘাট থেকে তার সমস্ত সাজসরঞ্জাম নিয়ে হতাশ হয়ে উঠে পড়তে বাধ্য হয়।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পের যামিনী চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
উত্তর 👉🏻 প্রেমেন্দ্র মিত্রের ❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পটির একটি অন্যতম হৃদয়স্পর্শী চরিত্র হল যামিনী। গ্রামীণ বাংলার সরল, নিরিহ এই নারী চরিত্রটি গল্পটিকে এক অদ্ভুত রহস্যময়তায় ভরিয়ে তুলেছে। গল্পের নায়কের সঙ্গে যামিনীর সাক্ষাৎ ও বিলিনের মধ্য দিয়ে প্রেমেন্দ্র মিত্র মানুষের জীবনের স্বপ্ন, আশা, নিরাশা এবং অবশেষে জীবনের বাস্তবতাকে তুলে ধরেছেন।
শারীরিক ও পারিবারিক বর্ণনা :– গল্পে যামিনী এক গরিব পরিবারের মেয়ে। ❝তার মুখের শান্ত করুণ গাম্ভীর্য দেখে মনে হবে জীবনের সুদীর্ঘ নির্মম পথ সে পার হয়ে এসেছে, তার ক্ষীণ দীর্ঘ অপুষ্ট শরীর দেখলে মনে হবে কৈশোর অতিক্রম করে যৌবনে উত্তীর্ণ হওয়া তার যেন স্থগিত হয়ে আছে।❞ তার বাবা মারা গিয়েছে এবং তার মা চোখে দেখতে পান না আর তিনি প্রায়ই মৃত্যুর পথে মৃত্যু সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে।
রহস্যের আবরণ ও রসিকতা :– যামিনী চরিত্রটি গোটা গল্প জুড়ে এক রহস্যের আবরণে ঢাকা থাকে। তার চুপচাপ স্বভাব, গভীর চোখ এবং রহস্যময় হাসি পাঠককে কৌতূহলী করে তোলে। গল্পে যামিনী প্রথমবার পুকুরঘাটে এক অচেনা মানুষ অর্থাৎ লেখকের তার প্রতি উপস্থিতি পাওয়ার জন্য লেখক কে উদ্দেশ্য করে বলে যে ❝বসে আছেন কেন? টান দিন।❞
সেবা পরায়ণতা :– যামিনী একজন অত্যন্ত সেবা পরায়ণ মেয়ে। সে তার অন্ধ মায়ের সেবা তো করতোই তার সাথে তার সেই ছোট্ট কুটিরে একদিন (গল্পে উল্লিখিত লেখকের ছিপ ফেলে মাছ ধরার দিন) লেখক ও তার বন্ধুবান্ধবদের জন্য দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে। এর থেকেই বোঝা যায় তার সেবা পরায়ণতা তার স্বভাবেরই অংশ।
সহজ-সরল, শান্ত ও গাম্ভীর্য :– যামিনী একজন শান্ত, সহজ-সরল ও গম্ভীর স্বভাবের মেয়ে। সে খুব কম কথা বলে। তার মুখে হাসি খুব কম দেখা যায়। তবে তার কোনো অনাবশ্যক লজ্জা বা আড়ষ্ঠতা নেই, আছে শুধু চোখে এক অদ্ভুত আলো যা তার মনের গভীরতা প্রকাশ করে। সে জীবনের জটিলতা বুঝতে পারে না। তার জীবন খুব সহজ। সে কখনো কোনো কাজের বোঝা বোধ করে না। কারণ সে জানে যে বাবা মারা গেছে এবং মা মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে সুতরাং তাকেই বাড়ির সব কাজ করতে হবে।
মায়ের প্রতি ভালোবাসা :– গল্পে যামিনীর কাছে জানা যায়, নিরঞ্জন যামিনীকে বিবাহ করবে বলে তা মাকে কথা দেয় কিন্তু তারপর সে বিদেশে চলে গেলে সে আর ফিরে আসেনি। তারপরে লেখক ও তার বন্ধুবান্ধবরা যামিনীদের বাড়িতে পৌঁছালে তার মা ভাবেন যে তাদের বাড়িতে সেই নিরঞ্জন ফিরে এসেছে কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি আর একথা যামিনী তার মাকে বোঝাতে পারিনি। তাই যামিনী তার মনিদা এবং লেখকের সহায়তায় তার মাকে একটু শান্তি প্রদান করতে চেয়েছিল।
সামাজিক বাস্তবতার প্রতিফলন :– যামিনীর জীবন যাপন, তার স্বপ্ন, আশা এবং নিরাশা সব মিলিয়ে গ্রামীণ বাংলার নারীর জীবনের এক সত্যিকারের চিত্র উপস্থাপন করে। এবং ❝পরিত্যক্ত বিস্মৃত জনহীন লোকালয়ের সমস্ত মৌন-বিদ্যা যেন তার মুখে ছায়া।❞ যামিনীর মুখের শান্ত করুন গাম্ভীর্য দেখে মনে হয় সে জীবনের অনেক কিছু দেখেছে। তার ক্ষীন দৃষ্টি, অপুষ্ট শরীরও তার দুঃখ কষ্টের ইঙ্গিত দেয়।
যামিনী চরিত্রটি প্রেমেন্দ্র মিত্রের সৃষ্টি করা সবচেয়ে জনপ্রিয় চরিত্রগুলির মধ্যে একটি হলেও গল্পের শেষে যামিনী কোথায় গেল, তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে, এই প্রশ্নগুলি পাঠকের মনে চিরদিনের জন্য থেকে যায়। এমনকি গল্পের অবশেষে লেখকেরও মনে হয় যে তেলেনাপোতা বলে সত্যিই কোথাও কিছু নেই এবং তার মনে সেই যামিনী চরিত্রটি কোনো এক দুর্বল মুহূর্তের অবাস্তব কুয়াশার কল্পনায় পরিণত হয়।
প্রেমেন্দ্র মিত্রের ❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পে যামিনীর মায়ের চরিত্র বিশ্লেষণ করো।
উত্তর 👉🏻 প্রেমেন্দ্র মিত্রের “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পে যামিনীর মা চোখে দেখতে পান না কিন্তু তিনি একজন মমতাময়ী মা, আশাবাদী স্বপ্নদ্রষ্টা, ধৈর্যহীন ও অসহিষ্ণু, স্নেহময়ী এবং একইসঙ্গে উৎকণ্ঠিত। এই গল্পে তাঁর চরিত্রটি মূলত একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করে, যা গ্রামীণ নারীর জীবনের স্বপ্ন, আশা, বাস্তবতা এবং হতাশার একটি সমন্বয় প্রকাশ করে। গল্পের কাহিনীতে তার উপস্থিতি সীমিত হলেও তার চরিত্রটি গল্পের অন্যান্য চরিত্রের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।
মমত্ববোধ :– যামিনীর মা একজন অতি মমতাময়ী মা। সে তার মেয়ের জন্য সে সবসময় চিন্তিত থাকে। গল্পে তার এই মমত্ববোধ স্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে। নিরঞ্জনের কথা শুনে তিনি যামিনীর জন্য কতটা আশাবাদী হয়ে ওঠেন, তা গল্পের বিভিন্ন স্থানে স্পষ্ট। তিনি চোখে না দেখতে পেলেও যামিনীকে নিরঞ্জনের সঙ্গে দেখার জন্য কতটা আকুল হয়ে ওঠেন, তাও গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। যামিনীদের বাড়িতে লেখক এবং তার বন্ধু-বান্ধবদের উপস্থিতিতে তিনি লেখকদের নিরঞ্জন ভেবে যামিনীকে বলেন যে– ❝সে নিশ্চয় এসেছে। শুধু লজ্জায় আমার সঙ্গে দেখা করতে পারছে না, আমি জানি। তাকে ডেকে দে। কেন তুই আমার কথা শুনিস না?❞
আশাবাদী :– যামিনীর মা একজন অতি আশাবাদী নারী। তিনি সবসময় ভালোর আশা করে চলেছেন। নিরঞ্জনের কথা শুনে তিনি মনে করেন যে তার মেয়ের জীবন এবার সুখী হবে। তিনি নিজের এই আশাকে এতটাই জোরালোভাবে ধরে রাখেন যে বাস্তবতা তার কাছে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে। যদিও তার জীবন যাপন খুবই কঠিন, তবুও সে আশাবাদী। ভবিষ্যতের প্রতি তার আশা ছিল। সে সবসময় ভেবেছে তার মেয়ে একদিন ভালো জীবন পাবে।
ধৈর্যহীনতা ও অসহিষ্ণুতা :– যামিনীর মা একজন ধৈর্যহীন ও অসহিষ্ণু নারী। তিনি নিজের আশাকে এতটাই জোরালোভাবে ধরে রাখেন যে অন্যদের কথা শুনতে চান না। তিনি নিজের মতো করেই সবকিছু বিশ্বাস করতে চান।
স্নেহময়তা :– যামিনীর মা একজন স্নেহময়ী নারী। সে তার পরিবারের প্রতি অসীম স্নেহ রাখে। তার এই স্নেহময়তা তার এই তার এই স্নেহময়তা যেন ফলগুধারার মতো যেন যামিনীর জীবনে বর্তাই
উৎকণ্ঠা :– যামিনীর মা একজন উৎকণ্ঠিত নারী। তিনি সবসময় ভবিষ্যতের কথা ভেবে চিন্তিত থাকেন। নিরঞ্জনের আগমনের জন্য তিনি কতটা উৎকণ্ঠিত হয়ে ওঠেন, তা গল্পের একস্থানে স্পষ্ট। যেমন– “সে নিশ্চয় এসেছে। শুধু লজ্জায় আমার সঙ্গে দেখা করতে পারছে না, আমি জানি।”
যামিনীর মায়ের চরিত্রটি গল্পের মূল কেন্দ্রবিন্দু। তিনি একজন সাধারণ গ্রামীণ নারীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর মধ্যে মমত্ববোধ, আশাবাদ, ধৈর্যহীনতা, স্নেহময়তা এবং উৎকণ্ঠা এই সবই একসঙ্গে বিদ্যমান। তাঁর চরিত্রের মাধ্যমে প্রেমেন্দ্র মিত্র গ্রামীণ নারীর জীবনের স্বপ্ন, আশা, বাস্তবতা এবং হতাশার একটি সমন্বয় তুলে ধরেছেন।
❝কে, নিরঞ্জন এলি?❞ – নিরঞ্জন কে? কোন পরিস্থিতিতে গল্পের নায়ক নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। ২+৩
উত্তর 👉🏻 রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের ❝তেলেনাপোতা আবিষ্কার❞ গল্পের কথক বা নায়ক তার বন্ধু মণির কাছ থেকে নিরঞ্জনের ব্যাপারে সবকিছু জানতে পারে যে, ❝নিরঞ্জন বলে ওঁর দূর-সম্পর্কের এক বোনপোর সঙ্গে ছেলেবেলায় যামিনীর সম্বন্ধ উনি ঠিক করেছিলেন। বছর চারেক আগেও সে ছোকরা এসে ওঁকে বলে গিয়েছিল বিদেশের চাকরি থেকে ফিরে ওঁর মেয়েকে সে বিয়ে করবে। সেই থেকে বুড়ি এই অজগর-পুরীর ভেতর বসে সেই আশায় দিন গুনছে।❞ তারপর কথক নিজে থেকে জিজ্ঞাসা করেন না যে, ❝নিরঞ্জন কি এখনো বিদেশ থেকে ফেরেনি?❞ এই প্রশ্নের উত্তরে তখন তার বন্ধু মনি বলে যে, ❝আরে, সে বিদেশে গিয়েছিল কবে যে ফিরবে। নেহাত বুড়ি নাছোড়বান্দা বলে তাকে এই ধাপ্পা দিয়ে গিয়েছিল। এমন ঘুঁটে-কুড়ুনির মেয়েকে উদ্ধার করতে তার দায় পড়েছে। সে কবে বিয়ে-থা করে দিব্যি সংসার করছে।❞
☆ নায়কের নিরঞ্জনের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়া ☆
গল্পের নায়ক তার বন্ধু মণির সহায়তায় তেলেনাপোতায় আসে। আর যামিনীদের বাড়িতে একদিন দুপুরে খাওয়ার নিমন্ত্রণ হয় এবং খাওয়ার শেষে যামিনী তার দূর সম্পর্কের এক দাদা, কথকের বন্ধু মনিকে বলে যে, ❝মা তো কিছুতেই শুনছেন না।❞ কেবলই বলছেন– ❝সে নিশ্চয় এসেছে।❞ তখন সেই মনিদা যামিনীকে বলেন সে যামিনীর মাকে বুঝিয়ে বলবেন যে নিরঞ্জন আর ফিরে আসবেনা এবং সেই সময় কথক তার বন্ধুর সাথে যামিনীর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে গিয়ে যামিনীর মা মৃত্যুশয্যায়। তাকে দেখে নায়কের মনে হয়, তার একটি ছোট্ট মিথ্যা যামিনীর মায়ের মনের শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে। কারণ যামিনীর মা কথক এবং তার বন্ধুদের উপস্থিতি পেয়ে বলেন যে, ❝কে, নিরঞ্জন এলি? অভাগী মাসিকে এতদিনে মনে পড়ল বাবা?…এবার তো আর অমন করে পালাবি না?❞ – যামিনীর মায়ের এই কথা শুনে নায়কের মন কেঁপে ওঠে। আর তারপরেই গল্পের কথক তার বন্ধুকে কথা বলতে বাধা দিয়ে বলে ওঠেন ❝না মাসিমা, আর পালাবো না।❞ -এই কথা বলে নায়ক নিজেকে নিরঞ্জন হিসেবে পরিচয় দেয়। এটি ছিল এক মুহূর্তের সিদ্ধান্ত, যা নায়কের মনে হঠাৎই জাগে।
❝এই প্রতিশ্রুতি কেবল মৃত্যুমুখিনী বৃদ্ধাকে সান্ত্বনা দেওয়ার কোনো কৌশল বা ছল ছিল না। ছিল অকপট প্রতিশ্রুতি।❞– গল্পের বর্ণনা থেকে বোঝা যায় যে, নায়কের এই প্রতিশ্রুতি মিথ্যা হলেও, সেটি মন থেকেই বেরিয়ে আসে। নিরঞ্জন হিসেবে পরিচয় দেওয়া নায়কের জন্য একটি সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না। এটি ছিল একদিকে যেমন একটা মিথ্যা, অন্যদিকে মানবতার বিজয়ও। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে নায়ক যামিনীর মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে চেয়েছিল।
❝না মাসিমা, আর পালাবো না।❞ –কে, কাকে এরকম উক্তি করেছেন? এই উক্তির আলোকে বক্তার চরিত্র বিশ্লেষণ কর।
উত্তর 👉🏻 কবি-সাহিত্যিক প্রেমেন্দ্র মিত্রের “তেলেনাপোতা আবিষ্কার” গল্পের এই উক্তিটি করেছেন নায়ক। তিনি এ কথা বলেছেন গল্পের একজন বৃদ্ধা মহিলা যামিনীর মায়ের প্রতি। এই উক্তির মাধ্যমে নায়কের চরিত্রের বিভিন্ন দিক উন্মোচিত হয়েছে।
গভীর অনুভূতি :– গল্পের নায়কের মনে এক গভীর অনুভূতি জাগে। সেই অনুভূতি শুধু তার নিজের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং গল্পের অন্য চরিত্র যামিনীর উপরও প্রভাব ফেলে। নায়কের কাছে, তেলেনাপোতা আর শুধু একটি জায়গা নয়, বরং অতীতের স্মৃতির প্রতিচ্ছবি। সেখানে গিয়ে সে তার অতীতের অনেক কিছুকে নতুন করে উপলব্ধি করে। ঠিক যেমন সে যামিনীর চোখে অভিব্যক্তি না থাকলেও তার মনের অনেক কথা বুঝতে পারে।
দায়িত্ববোধ ও দায়িত্বপালনের অভাব :– ❝আমি তোমায় কথা দিচ্ছি মাসিমা। আমার কথা নড়চড় হবে না।❞ –এই উক্তি থেকে বোঝা যায় যে, নায়ক নিজের ওপর দায়িত্ববান। নায়ক হঠাৎ করে আবেগ তাড়িত হয়ে যামিনীকে বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেন। কিন্তু সেখান থেকে নগরজীবনে ফিরে এলে নগর জীবনের বাস্তবতা নায়ককে তার দায়িত্ব পালন করতে দেয়নি।
শান্তি প্রদানের ইচ্ছা :– যামিনীর মায়ের বোনপো নিরঞ্জন যামিনীকে বিবাহ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সেই প্রতিশ্রুতি পালন করেনি। আর যামিনীদের বাড়িতে নায়কদের উপস্থিতিতে যামিনীর মা ভাবে নিরঞ্জন এসেছে। আর এই অসুস্থ এবং দরিদ্র যামিনীর মাকে একটু শান্তি প্রদানের জন্য নায়ক বলে, “না মাসিমা, আর পালাবো না”।
রোমান্টিকতা :– নায়ক শহুরে জীবনযাত্রায় অভ্যস্তু, কিন্তু গ্রামীন জীবনের রোমান্টিকতায় আবেগ তাড়িত হয়ে তেলেনাপোতা পাড়ি দেয়।গ্রামে থেকে সে গ্রামের সাদামাটা জীবনকে ভালোবেসে ফেলে। ফিরে যাওয়ার সময় গরুর গাড়িতে বসে নায়ক মনে মনে মেয়েটিকে বলছে, “আমি আবার ফিরে আসব।”
রসিকতা :– ফেরার সময় যামিনী নায়কের কাছে গিয়ে বলে তার বড়শি-টরশি সব পড়ে রইল, তখন নায়ক উত্তর দেয় যে একবার তেলেনাপোতার মাছ ধরতে পারেনি বলে তেলেনাপোতার মাছ তাকে ধোকা দিতে পারবে না। তিনি আবারও ফিরে আসবেন। এই কথার মাধ্যমে তাহলে রসিকতার চরিত্র ফুটে ওঠে।
“না মাসিমা, আর পালাবো না” এই উক্তির মাধ্যমে প্রেমেন্দ্র মিত্র নায়কের চরিত্রকে একজন দায়িত্ববান, মানবিক, পরিবর্তনশীল এবং সম্পর্ক গড়ার ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি হিসেবে তুলে ধরেছেন। এই উক্তি গোটা গল্পের একটি মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করে এবং নায়কের চরিত্রের গভীরতা প্রকাশ করে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -
All suggestions are very good but this things should be in pdf form not in text.