সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীকে আজকের এই প্রবন্ধ রচনাতে স্বাগতম! আজকে আমরা বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনাটি নিয়ে বিস্তারিত তোমাদের নোট দিতে চলেছি। বাংলার উৎসব এই প্রবন্ধ রচনাটি বিভিন্নভাবে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, স্কুলের ফাইনাল পরীক্ষা প্রায় বছর ছাড়া ছাড়াই আসতে থাকে – কাজেই এটার গুরুত্ব আর আলাদা করে তোমাদের বোঝাতে হবে না। তাই চেষ্টা করবেন নিজের ভাষায় সেরা ভাবে উপস্থাপন করার সেক্ষেত্রে বাড়তি প্রাধান্য পাবে।
বাংলার উৎসব প্রবন্ধ রচনা
"ছক বাঁধা এই জীবন মাঝে মাঝে মুক্তি পেতে চায়,
উৎসবের আনন্দ সুধাপানে জীবনের দুঃখ ভুলে যায়"
ভূমিকা :–
কবি ঈশ্বর গুপ্ত রসিকতা করে বলেছেন, – “এত ভঙ্গ বঙ্গদেশে, তবু রঙ্গে ভরা ”
বঙ্গদেশে বারো মাসে তেরো পার্বন। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনের একঘেয়েমির মাঝে নুতনের বার্তা নিয়ে আসে উৎসবের কলধ্বনি। উৎসবের মধ্যে দিয়ে বাঙালির ধর্ম, সমাজ, সংস্কৃতি প্রভৃতির পরিচয় পাওয়া যায়।
উৎসবের প্রকারভেদ :–
উৎসবকে প্রধানত চারভাগে ভাগ করা যেতে পারে। যথা– (ক) রাষ্ট্রীয় উৎসব (খ) ধর্মীয় উৎসব (গ) সামাজিক উৎসব (ঘ) ঋতু উৎসব। রাষ্ট্রীয় উৎসব সমগ্র দেশ জুড়ে পালন হয়। অপরদিকে ধর্মীয় উৎসব নির্দিষ্ট ধর্মের মধ্যে সীমাবদ্ধ, আবার সামাজিক উৎসব এক অর্থে পারিবারিক উৎসব বলা যেতে পারে। এইরকম বিভিন্ন উৎসব আছে।
রাষ্ট্রীয় উৎসব :–
২৬ শে জানুয়ারি প্রতাপ্তন্ত্র দিবস, ১৫ই আগষ্ট স্বাধীনতা দিবস, ২৫শে বৈশাখ রবীন্দ্রনাথের জন্মদিন, ২রা অক্টোবর গান্ধীজির জন্মদিন, ২৩ জানুয়ারি নেতাজীর জন্মদিন, ১২ জানুয়ারি বিবেকানন্দের জন্মদিন প্রভৃতি জাতীয় উৎসবের অন্তর্গত। ঐসব উৎসব দেশবাসী সাহিত্য, সংগীত ও শোভাযাত্রার মাধ্যমে পালন করেন।
ধর্মীয় উৎসব :–
ধর্মপ্রাণ বাঙালি জীবনযাপনের প্রতিটি পদক্ষেপে ধর্মীয় অনুশাসন, আচার-অনুষ্ঠান মেনে চলে। তাই বাঙালির জীবনে ধর্মীয় কেন্দ্রিক অনেক উৎসবও রয়েছে। বাঙালির হিন্দু সমাজে বিশেষ কিছু আনন্দমুখর উৎসব রয়েছে যেমন– দুর্গাপুজো, সরস্বতীপুজো, কালীপুজো এছাড়াও রয়েছে রথযাত্রা, দোলযাত্রা, ঝুলনযাত্রা, রাস পূর্ণিমা, রাখি পূর্ণিমা, চড়ক-গাজন প্রভৃতি। এর সঙ্গে রয়েছে বাঙালি মুসলমানদেরও নানা ধর্মীয় উৎসব, যেমন- ইদলফেতর, ইদুজ্জোহা, মহরম, সবেবরাত প্রভৃতি। খ্রিস্টানরা পালন করেন বড়োদিন, গুড ফ্রাইডে, ইস্টার স্যাটারডে। এ ছাড়াও রয়েছে নানকজয়ন্তী, বুদ্ধজয়ন্তী, পরেশনাথের উৎসব। এইসব ধর্মীয় উৎসবে দিনগুলিতে বাঙালিরা প্রচুর আনন্দ উপভোগ করে।
সামাজিক উৎসব :–
বাঙালি শুধু ধর্মীয় আবেগপ্রবণ জাতিই নয়, বাঙালির ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে মিলিয়ে রয়েছে বিভিন্ন পারিবারিক এবং সামাজিক অনুষ্ঠান। যেমন– অন্নপ্রাশন, বিবাহ, জামাইষষ্ঠী, ভাতৃদ্বিতীয়া, গৃহ প্রবেশ এবং ব্রাহ্মর সমাজে রয়েছে উপনয়ন। বাঙালির দৈনন্দিন জীবনে এই সমস্ত উৎসব গুলি অতপ্রোতভাবে জড়িত। এই উৎসব গুলিতে সমগ্র বাঙালি সমাজ যুক্ত না হলেও বহু মানুষই এই উৎসবে আনন্দে মেতে ওঠে।
ঋতু উৎসব :–
বাঙালির উৎসবের একটি অন্যতম দিক হলো ঋতু উৎসব। বাঙালি তার ধর্মীয় উৎসব এবং সামাজিক উৎসব বাদেও বিভিন্ন ঋতুকে ঘিরে উৎসবে মেতে উঠে। যেমন– পৌষ মাসে রয়েছে পৌষমেলা, পিঠে পার্বণ, তারপর রয়েছে অঘ্রানে নবান্ন, বছরের শুরুতে নববর্ষ প্রভৃতি উৎসবকে কেন্দ্র করে দুঃখ এবং দারিদ্রতার মাঝেও বাঙালি নতুন করে আনন্দে জেগে ওঠে।
উৎসবের ও মিলন :–
উৎসবের প্রধান উদ্দেশ্য ব্যাক্তিগত দুঃখ কষ্ট ভুলে সবার সাথে আনন্দে মেতে ওঠা। উৎসব বা অনুষ্ঠান আমাদেরকে বাধাহীন মেলামেশার সুযোগ করে দেয়। উৎসবের ময়দানে বাঙালির মধ্যে ভেদাভেদের কোনো প্রাচীর থাকেনা। পারস্পরিক আনন্দ, প্রীতি ও শুভেচ্ছা বিনিময়ের মধ্য দিয়েই রচিত হয় সুন্দর সুন্দর বন্ধুত্ব। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলের এই আনন্দে মেতে ওঠা বাঙালির উৎসব পালনকে করে তোলে সার্থক।
উপসংহার :–
প্রতিদিনের গতানুগতিক জীবন থেকে মুক্তি পেতে কে না চায়, সকলেই চায় বৈচিত্রের স্বাদ। সকলেই চায় নিজের গণ্ডিবদ্ধ জীবনকে বৃহত্তর ক্ষেত্রে মুক্তি দিয়ে অসংখ্য প্রাণের স্পর্শে সরস করতে।তাই জীবনে উৎসবের প্রয়োজন অপরিসীম। তাই বাঙালি মাত্রই উৎসবপ্রিয়। তাই যে-কোনো বিষয়কেই তারা উৎসবে রূপায়িত করে। একালে ঐতিহ্যবাহিত উৎসবগুলির পাশাপাশি গ্রামীণ ঐতিহ্যকে মনে রেখে কিছু নাগরিক উৎসবের সূচনা ঘটেছে। নানা সাংস্কৃতিক উৎসবকেও বাঙালি তার জীবনযাত্রার অঙ্গ করে তুলেছে এর মধ্যে চলচ্চিত্র উৎসব, নাট্যোৎসব, কবিতা উৎসব, বইমেলা উৎসব উল্লেখযোগ্য। তাই-
'নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান, বিবিধের মাঝে দেখো মিলন মহান'
তোমরা এই একটা রচনা বা ভালো করে করে গেলে এই সম্পর্কিত বা উৎসব সম্পর্কিত অনেক রচনায় তোমরা অনায়াসে লিখে আসতে পারবে। তোমাদের জন্য একদম পয়েন্ট করে করে সমস্ত কিছুটা বলা হলো তবে তোমরা যদি নিজস্বতা দেখাতে পারো সে ক্ষেত্রে আরো ভালো নম্বর পাবে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -