নমস্কার প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, আজকের এই পোস্টে তোমাদের জন্য যে গুরুত্বপূর্ণ রচনাটি শেয়ার করা হলো সেটা হচ্ছে “বিশ্ব উষ্ণায়ন” গ্লোবাল ওয়ার্মিং। নবম শ্রেণী থেকে শুরু করে মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত সকল ফাইনাল পরীক্ষার জন্যই এই রচনাটা করে রাখা অত্যন্ত জরুরী।
বিশ্ব উষ্ণায়ন: কারণ ও প্রতিকার – প্রবন্ধ রচনা
"কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর!"
ভূমিকা :—
এই কবিতার পঙ্ক্তিগুলো যেন আজকের মানবসমাজের করুণ পরিণতির পূর্বাভাস। সভ্যতার উন্নতির নামে আমরা প্রকৃতির যে নিদারুণ ক্ষতি করেছি, তার ফলশ্রুতিতে সৃষ্টি হয়েছে এক ভয়ঙ্কর অভিশাপ—”Global Warming” বাংলাতে বিশ্ব উষ্ণায়ন। শিল্পায়ন, নগরায়ন, এবং অরণ্য নিধনের মাধ্যমে আমরা পৃথিবীর স্বাভাবিক ভারসাম্য নষ্ট করে ফেলেছি। এর ফলে ক্রমাগত বাড়ছে পৃথিবীর উষ্ণতা, যা আমাদের ভবিষ্যতকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড় করিয়েছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ :—
আমরা সকলেই অনুভব করছি যে, পৃথিবী আগের চেয়ে অনেক বেশি গরম হয়ে উঠছে। গ্রীষ্মকাল আরো দীর্ঘ এবং তীব্র হচ্ছে, বর্ষার পরিমাণ ও সময়কাল পরিবর্তিত হচ্ছে, এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘন ঘন ঘটনা ঘটছে। এই সব কিছুর মূল কারণ হল বিশ্ব উষ্ণায়ন। বিশ্ব উষ্ণায়ন হল পৃথিবীর গড় তাপমাত্রার ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি। এই বৃদ্ধির ফলে আমাদের গ্রহের জলবায়ু ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন ঘটছে।
❝দিনের দিন বাড়ছে গরম, মেরুর বরফ গলে।
সুন্দর প্রকৃতি হচ্ছে নষ্ট, জলবায়ু যাচ্ছে বদলে।❞
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হল বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি ও বন ধ্বংস।
গ্রিনহাউস গ্যাস– আমরা যখন জীবাশ্ম জ্বালানি কয়লা, তেল, গ্যাসের ব্যবহার করি, বন উজ্জ্বলন হয়, গাড়ি চালাই, কারখানা চালাই, তখন বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন এবং নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস নির্গত হয়। এই গ্যাসগুলিকে গ্রিনহাউস গ্যাস বলে। এই গ্যাসগুলি সূর্যের আলোকে পৃথিবীতে আসতে দেয় কিন্তু আবার ফিরে যাওয়া আটকে দেয়, ফলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে (Greenhouse Effect)।
বন ধ্বংস– বন গাছ কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ছাড়ে। বন ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইডের পরিমাণ বাড়ে এবং বিশ্ব উষ্ণায়ন ত্বরান্বিত হয়।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব :—
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে পৃথিবীতে ইতিমধ্যেই নানা পরিবর্তন ঘটতে শুরু করেছে। এর প্রধান প্রভাবগুলো হল:
- প্রাকৃতিক বিপর্যয়: হিমবাহ গলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে, যার ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যার ঝুঁকি বাড়ছে।
- খরা ও অনাবৃষ্টি: কৃষিক্ষেত্রে জলাভাব দেখা দিচ্ছে, যার ফলে খাদ্য উৎপাদনে সঙ্কট সৃষ্টি হচ্ছে।
- জীববৈচিত্র্যের হ্রাস: বহু প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
- স্বাস্থ্য সমস্যার বৃদ্ধি: বাড়তি উষ্ণতার ফলে বিভিন্ন রোগব্যাধি যেমন—ডেঙ্গু, ম্যালেরিয়া, এবং তাপঘাতের (Heat Stroke) মতো সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- আবহাওয়ার অস্বাভাবিক পরিবর্তন: ‘এল নিনো’ এবং ‘লা নিনার’ মতো আবহাওয়ার জটিল প্রক্রিয়াগুলো ক্রমেই প্রকট হচ্ছে।
বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিরোধ ব্যবস্থা:—
বিশ্ব উষ্ণায়নের ভয়াবহতা থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সম্মিলিত উদ্যোগ এবং দায়িত্বশীল আচরণই একমাত্র উপায়। প্রতিরোধ ব্যবস্থাগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়—বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি।
প্রথমত, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ব্যবহার:
বিশ্ব উষ্ণায়নের মূল কারণগুলির মধ্যে জীবাশ্ম জ্বালানির অতিরিক্ত ব্যবহার উল্লেখযোগ্য। এর পরিবর্তে নবায়নযোগ্য শক্তি যেমন—সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, এবং জলবিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়াতে হবে।
তাছাড়া, কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং জৈব সারের প্রচলন বাড়াতে হবে। শিল্পক্ষেত্রে CFCs (Chlorofluorocarbons) বা ক্লোরো-ফ্লোরো-কার্বন নির্গমন কমানোর জন্য উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হবে। পেট্রোলিয়াম এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় রোধ করে পরিবেশ বান্ধব উপায়ে তাদের ব্যবহার করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন:
বনাঞ্চল নিধনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। তাই নির্বিচারে বৃক্ষনিধন বন্ধ করে বৃক্ষরোপণের উদ্যোগ নিতে হবে। নতুন বনসৃজন প্রকল্প চালু করতে হবে, কারণ বৃক্ষগুলি প্রাকৃতিকভাবে কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে। এই উদ্যোগ ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি স্বাস্থ্যকর পৃথিবী উপহার দিতে সাহায্য করবে।
তৃতীয়ত, সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি:
আমাদের প্রত্যেককেই পরিবেশ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিতে হবে। “The Earth is what we all have in common.”—উইন্ডেল বেরি (Wendell Berry)-এর এই উক্তি আমাদের শিখায় যে পৃথিবী সবার জন্য, তাই এটি রক্ষা করা আমাদের সবার দায়িত্ব।
সর্বোপরি, আন্তর্জাতিক উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। বিভিন্ন দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রপুঞ্জকে (United Nations) জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। যেমন—১৯৭৯ সালের জেনেভা সম্মেলন বা ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তির মতো উদ্যোগগুলোকে বাস্তবায়ন ও উন্নত করতে হবে।
উপসংহার :—
বিশ্ব উষ্ণায়নের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি এবং কাজের পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনতেই হবে। “We do not inherit the earth from our ancestors; we borrow it from our children.”—এই নীতিতে বিশ্বাস করে আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ছোট ছোট পরিবর্তন আনার মাধ্যমে আমরা বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারি।
মানুষের উদ্যোগ, প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতা, আর সচেতনতার আলোয় আমরা পৃথিবীকে আবার সবুজে-নীলে সেজে তুলতে পারি।
"যে পৃথিবী হাসে সবুজে,
সেই পৃথিবীই থাকবে বাঁচিয়ে।"
তো এখান থেকে বিশ্ব উষ্ণায়ন বা গ্লোবাল ওয়ার্মিং সম্পর্কিত যেকোনো ধরনের রচনায তোমরা অনায়াসে লিখে নিতে পারবে। অনেক সময় ঘুরিয়ে বিশ্ব উষ্ণায়ন ও গ্রীন হাউস এফেক্ট এই ধরনের লিখতে দিতে পারে অথবা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রতিকার ও ছাত্র সমাজের ভূমিকা এই ধরনের নানা রকম একই জিনিস ঘুরিয়ে দেবে। এখানে সমস্ত তথ্য তোমাদের জানা থাকলে যে কোন প্রবন্ধ রচনা লিখে দিতে পারবে।
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -