দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি | বিজ্ঞানের জয়যাত্রা

EduTips Tutor

Published on:

Bigyan o Prajukti Prabandha Rachana Bengali Dainandin Jibone Bigyan

"যদি বেঁচে যাও এবারের মতো, যদি কেটে যায় মৃত্যুর ভয়
জেনো বিজ্ঞান লড়েছিলো একা, মন্দির মসজিদ নয়।"

ভূমিকা :–                

– এটা একটা ছড়া হলেও এটা বাস্তবে সত্যি। কারণ বিজ্ঞান একা লড়েছিল বলে আজ বিজ্ঞানের এত অগ্রগতি। কোনো মনীষী বলেছিলেন, উনিশ শতকটা ছিল দার্শনিকদের যুগ এবং সভা সমিতির যুগ। তারপরে বিশ শতক এলো বিজ্ঞানীদের যুগ আর বর্তমানের যুগ অর্থাৎ একবিংশ শতাব্দীর হল “বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যুগল অন্বেষণের যুগ”। আধুনিক সভ্যতায় বিজ্ঞান এক অপরিহার্য বিষয়। ব্যবহারিক থেকে শুরু করে দৈনন্দিন জীবনে এক-পা চলতে গেলে বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তির সাহায্য ছাড়া চলতে পারি না। এক কোথায় বলতে গেলে বিজ্ঞান ছাড়া আমাদের জীবন অচল।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পর্ক :–   

নিত্য নতুন সমস্ত সত্যের সন্ধানে বিজ্ঞান লেগে রয়েছে এবং সমস্ত সত্যকে কাজে লাগিয়ে নতুন নতুন ব্যবহারিক জিনিস আবিষ্কার করে চলেছে। তার মধ্যে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি আবিষ্কার হল ‘বিদ্যুৎ’, যা এখন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত অপরিহার্য ফসল।

আমাদের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি মুহূর্তের সঙ্গেই জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞান। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমারা যা কিছু ব্যবহার করি, সে সবই বিজ্ঞানের দান। এমনকি রাতে ঘুমানোর সময়ও আমরা বিজ্ঞানের প্রযুক্তিগত বিভিন্ন আবিষ্কারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নির্ভর করে থাকি।  
 
প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞানের অবদান :–

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত প্রায় প্রতিটি জিনিস বিজ্ঞানের দান। দিনের প্রথম পর্বে ঘড়ি আমাদের জানিয়ে দেয় সময়ের সংকেত, রান্নার জন্য ব্যবহৃত হয় প্রেসার কুকার, গ্যাস, মাইক্রোওভেন, ইন্ডাকশন কুকার, মিক্সার, জুসার প্রভৃতি। শীতকালে স্নানের সময় পেয়ে যাই ওয়াটার হিটার। এইসব যন্ত্রপাতি আধুনিক জীবনকে সহজতর করে তুলেছে।  
 
চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– 

"আরো আরো সামগ্রী ভোগ যাতে করে যেতে পারি,
গড় আয়ু বাড়িয়ে দাও বিজ্ঞান খুব তাড়াতাড়ি।"

চিকিৎসাক্ষেত্রেও বিজ্ঞান কৃতিত্বের ছাপ রয়েছে। আগে মানুষ যেসব ভয়ংকর মহামারীতে মারা গেছে বিজ্ঞান এসে সেই সমস্ত মহামারীর ঔষধ আবিষ্কার করেছে। ফলে মানুষের গড় আয়ু অনেক বেড়ে গেছে। এখন ক্যানসারের মতো মারণ রোগেরও চিকিৎসা সম্ভব। তাছাড়া, বিভিন্ন ধরণের রোগ নির্ণয়কারি যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে রোগ নির্ণয় করা সহজ হয়েছে এবং শল্যচিকিৎসা সহজ করার ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের প্রযুক্তির প্রভাবে অনেক উন্নতি ঘটেছে।

কৃষি ও শিল্প ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :–  

আগেকার দিনে যখন অনাবৃষ্টির কারণে খরা হত সেই বছরে কোন ফসল হতো না। কিন্তু এখন বিজ্ঞানের আবিষ্কারের ফলে ভৌমজল উত্তোলনের মাধ্যমে কৃষি কাজ করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়াও উচ্চফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি আবিষ্কার হওয়ার ফলে কৃষিক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আবার, শিল্প কারখানায় উন্নতমানের যন্ত্রপাতি ব্যবহারের ফলে কম শ্রমিকে, কম সময়ে এবং কম খরচে বেশি পণ্য উৎপাদিত হচ্ছে।

শিক্ষাক্ষেত্রে বিজ্ঞান :–

আমরা বিদ্যাসাগরের জীবনের কিছু কিছু কাহিনী পড়তে গিয়ে জানতে পেরেছি যে, তিনি রাস্তার ধরে ল্যাম্পপোস্টে থাকা হারিকেনের আলোতে পড়াশোনা করেছেন। এখন বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতিটি বাড়িতে বিদ্যুৎ সহজলভ্য হয়ে ওঠেছে।

প্রথাগতভাবে শিক্ষাব্যবস্থাতেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। পাঠদানের ক্ষেত্রে বড়ো কম্পিউটার ব্যবহার করে সাধারণ ক্লাসরুমকে স্মার্ট ক্লাসরুম করা হচ্ছে। এখন পাঠ্যপুস্তকের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন ডিজিটাল স্টাডি মেটেরিয়াল। ইন্টারনেট ব্যবস্থার উন্নতির ফলে এখন ছাত্রছাত্রীরা ঘরে বসে অনলাইন কোচিং নিতে পারছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি :–

"সময় যাচ্ছে চলে, কাজ করো চটপট
বিজ্ঞান করেছে শত দূরকে করেছে নিকট।"

প্রাচীনকালে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে গেলে ধনী ব্যক্তিরা ব্যবহার করত ঘোড়ার গাড়ি বা গোরুর গাড়ি এবং দরিদ্র মানুষেরা হেঁটেই দূরত্ব অতিক্রম করত। এখন বিজ্ঞানের উন্নতির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থাতেও চরম উন্নতি সাধিত হয়েছে। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ এখন অসীমদুরকেও নিকট করে ফেলেছে। পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে পৌঁছাতে হলে মানুষের কাছে দূরত্বটা আর কোনো বাধা নয়।

জল, স্থল এবং বায়ুপথে মানুষ এখন পৃথিবী পরিক্রমা করতে পারে। তাছাড়া, মানুষের তৈরি রকেট এখন গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে পাড়ি দিচ্ছে। মনুষ্য এবং পণ্য পরিবহনের পাশাপাশি তথ্য আদানপ্রদানের ক্ষেত্রেও বিজ্ঞান আজ সাফল্যের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে। চিঠি, টেলিগ্রাম, টেলিফোনের যুগ পেরিয়ে আমরা এখন মোবাইল জামানায় এসে পৌঁছেছি। হাতের তালুতে থাকা স্মার্টফোন ব্যক্তিমানুষকে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে।

বিনোদন ক্ষেত্রে বিজ্ঞান :– 

আগে মানুষ বিনোদন উপভোগ করার জন্য যাত্রাপালা, থিয়েটার এবং সংগীতচর্চা করত। এই বিনোদনের জগতে বিজ্ঞানের প্রথম অবদান ছিল চলচ্চিত্র বা সিনেমা। পর্দায় মানুষের নড়াচড়া দেখে সেদিন মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল। এরপর মানুষের বিনোদনের তালিকায় যুক্ত হয়েছিল রেডিও এবং টেলিভিশন।

সিনেমা, রেডিও এবং টিভি বিনোদনের এই তিন মাধ্যম নিয়ে মানুষের আশ্চর্য সীমা ছিল না। সেদিন কেউ ভাবতে পারেনি যে একদিন মানুষ তার পকেটে সমগ্র জগতের বিনোদন-ভান্ডার নিয়ে ঘুরে বেড়াবে। স্মার্টফোন আবিষ্কার হওয়ার ফলে এমনটাই ঘটেছে। বর্তমানে বিনোদন হল সম্পূর্ণ মোবাইল-কেন্দ্রিক। এই কারনেই  স্টিফেন হকিং বলেছেন– “বিজ্ঞান শুধু যুক্তির শিষ্যই নয়, রোমান্স ও আবেগেরও একটি।”

উপসংহার :–

একথাও সঠিক যে, বিজ্ঞান আমাদের দৈনন্দিন জীবন আরামদায়ক করে তুলেছে। কিন্তু সমস্যাটা হল আরামের জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হয়ে আমরাও যন্ত্রনির্ভর হয়ে যাচ্ছি। এই জন্য আমি বলি– 

"বিজ্ঞান, তুমি দিয়েছ বেগ, কিন্তু কেড়েছো আবেগ।" 

যে মানুষ যন্ত্র তৈরি করেছে সেই মানুষ যদি যন্ত্রের দাস হয়ে যায় তাহলে দুশ্চিন্তার অবকাশ থেকেই যায়। তাছাড়া, পরিবেশের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। আমাদের নিজেদের সুবিধার্থে অনেক সময় পরিবেশের ক্ষতি করে ফেলি। যেমন, এসি বা ফ্রিজ ব্যবহার করলে সেগুলি থেকে ক্লোরো-ফ্লুরো কার্বন গ্যাস নির্গত হয় যা পরিবেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই মানবসভ্যতার স্বার্থে পরিবেশবান্ধব উপায়ে বিজ্ঞানের ব্যবহার করাই কাম্য। 

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -

Leave a Comment

Join Group

Telegram

X Close Ad