মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা (বাংলাভাষায় বিজ্ঞান চর্চা) প্রবন্ধ রচনা Matri Bhashai Bigyan Charcha Rachana

EduTips Tutor

Updated on:

Matri Bhashai Bigyan Charcha Bengali Rachana

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা বা বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা এই রচনাটি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে চলেছে মাধ্যমিক পরীক্ষা, উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থেকে স্কুলের বোর্ড পরীক্ষার জন্য। দেখো বর্তমানে বিজ্ঞান ক্যাটাগরি থেকে যে একটা প্রবন্ধ রচনা আছে সেটার মধ্যে যেমন বিজ্ঞান আশীর্বাদ না অভিশাপ, বিজ্ঞান ও কুসংস্কার, সেই ক্যাটাগরিতে এটিও তোমাদের দেখে যেতে হবে।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞানচর্চা

❝মাতৃভাষায় বিজ্ঞান, দূর করে অজ্ঞান;
শিক্ষা পূর্ণ করে, ভরে তোলে মনপ্রান।❞

ভূমিকা :–

  বিজ্ঞানের সাধনা দিয়েই মানুষ পৃথিবীকে বৈচিত্রময়ী করে তুলেছে। কারণ, বিজ্ঞান মানব সভ্যতার উত্তরনের সিঁড়ি। অতিপ্রাচীন কাল থেকেই বিভিন্ন প্রতিকূলতা এবং মহামারি রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বিজ্ঞানই হয়েছে মানুষের হাতিয়ার। তাই সারা পৃথিবী জুড়ে শুরু হয়েছে বিজ্ঞান সাধনা, আর ভারতীয় বিজ্ঞান সাধনায় বাঙালি মনিষীরা স্বীকৃতী পেয়েছে। তাই বিজ্ঞানকে আরো এগিয়ে নিয়ে যেতে ভাষার মাধ্যমে বা বিদ্যাচর্চার মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চাকে আরো প্রসারিত করতে হবে।

মাতৃভাষায় শিক্ষা :–

শিক্ষার সঙ্গে মাতৃভাষা অতপ্রতভাবে জড়িত, তাই যুগ যুগ ধরে শিক্ষাবিদরা বলে গেছেন মাতৃভাষা শিক্ষার অন্যতম বাহন। রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,– ❝শিক্ষায়, মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ❞

 তাই UNESCO সিদ্ধান্ত নিয়েছে– "The best medium for teachings in the mother tounge of the people." অর্থাৎ মাতৃভাষায় শিক্ষার শ্রেষ্ঠ মাধ্যম।

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার ক্রমোন্নতি :–

বাংলায় বিজ্ঞানচর্চার সুত্রপাত হয়েছিল ইংরেজ হাতে। মেকলের মতে, ইংরেজি ভাষায় ছিল জ্ঞানবিজ্ঞানের অন্যতম মাধ্যম। পরবর্তীকালে বাংলার নবজাগরনের যুগে বিজ্ঞানীরা জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিজ্ঞান বিষয়ক প্রবন্ধ অক্ষয়কুমার দত্তের “বিদ্যাদর্শন” পত্রিকায় প্রকাশ করতে থাকে।

এইসময় বিবেকানন্দ, ডঃ মহেন্দ্রলাল সরকার, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর প্রমুখ বাংলায় বিজ্ঞান পুস্তিকার প্রকাশে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেন। এরপরে বিজ্ঞানী প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, মেঘনাদ সাহা, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, জগদীশচন্দ্র বসু প্রমুখ বাংলা ভাষায় উপযুক্ত পরিভাষা গঠনে সচেষ্ট হয়ে বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চাকে সকলের সামনে তুলে ধরেন।

বাংলাভাষায় বিজ্ঞানচর্চার যৌক্তিকতা :–

শিক্ষাবিদ ও মনিষীদের মত বিশ্লেষন করে, আমরা বুঝতে পারছি যে সকলে মাতৃভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানচর্চায় আগ্রহী। আর্কিমিডিস, মাদাম কুরি, নাগার্জুন, হেনরি বেকারেল, নীলস বোর প্রমুখ বিজ্ঞানীরা গ্রিক, ফরাসি, জার্মানি ভাষায় বিজ্ঞানচর্চায় সফল হয়েছেন। অর্থাৎ মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষা আয়ত্ত করতেও যথেষ্ট সময় ব্যয়িত হয়।

মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চার সীমাবদ্ধতা :–

মাতৃভাষার বিজ্ঞানচর্চার আপাতত কিছু সীমাবদ্ধতা আছে। অর্থাৎ, মাতৃভাষায় উচ্চশিক্ষার উপযুক্ত পাঠ্যপুস্তকের অভাব এবং পরিভাষার জটিলতার সম্মুখীন হতে হয়। তাই বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চাকে উপযুক্ত করে তুলতে হলে এগুলির ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে এবং নতুন নতুন পরিভাষার জন্ম দিতে হবে। তাই মাতৃভাষাকে বিজ্ঞান চর্চার মাধ্যম করতে হলে প্রতিনিয়ত উপযুক্ত অনুবাদ ও পরিভাষা গঠনের পরিকাঠামোর প্রয়োজন।

বর্তমান বিশ্বায়ন ও বিজ্ঞানচর্চা :–

আজকের বিজ্ঞানচর্চা যন্ত্রনির্ভর, অর্থাৎ কম্পিউটার ও ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল। কম্পিউটারের ভাষা মূলত ইংরেজি, যদিও এর ভাষা বাংলাতেও করা সম্ভব। কিন্তু বহু ভাষাভাষী দেশ অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার জন্য আমাদের দেশে বিপুল আয়োজন এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তাই এই বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনা করলে ইংরেজি ভাষাকে আমরা বিজ্ঞানচর্চার ভাষা হিসেবে সম্পূর্ণ বর্জন করতে পারি না।

বিজ্ঞানচর্চার সাম্প্রতিককাল :–

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলার বিজ্ঞানচর্চার জন্য অসংখ্যা বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশিত হচ্ছে। ❝ছোটদের বিজ্ঞান❞, ❝চাঁদমামা❞, মৃত্যুঞ্জয় প্রসাদ গুহের ❝আকাশ ও পৃথিবী❞, জিতেন্দ্রনাথ গুহের ❝মহাকাশ পেরিয়ে❞, দেবেন্দ্রনাথ বিশ্বাসের ❝মানবকল্যানে রসায়ন❞ বিশেষ উল্লেখযোগ্য। বলা যেতে পারে এই ধারাটি ক্রমশ শক্তিশালী হচ্ছে।

উপসংহার :–

বিজ্ঞান চর্চার ভাষা বিচারে আমাদের গোঁড়ামী করা চলবে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে মাতৃভাষাকে অবহেলা বা বিদেশি ভাষা ইংরেজিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করা উচিত নয়। প্রাথমিক শিক্ষা বা জনগণকে বিজ্ঞানচেতনায় সচেতন করা মাতৃভাষার মাধ্যমে অপরিহার্য। তেমনি উচ্চশিক্ষা, প্রযুক্তির পর্যায়ে বিজ্ঞানচর্চায় অবশ্য ইংরেজি ভাষা প্রয়োজন। তাই বিজ্ঞানচর্চার ভাষা নির্বাচনে আবেগ মুক্ত হয়ে আমাদের বাংলা এবং ইংরেজি দুটি ভাষাকেই সমান গুরুত্ব দেওয়া উচিত।


সবশেষে তোমাদের জন্য আরো একবার বলা তোমরা প্রবন্ধ রচনা বা যে কোন লেখা যতটা নিজের ভাষায় গুছিয়ে লিখতে পারবে তার পাশাপাশি পয়েন্ট করে বা যত ভালোভাবে প্রেজেন্ট করতে পারবেন নম্বরটা তার উপরেই। কাজেই আমাদের এটা রেফারেন্স হিসাবে নিয়ে নিজের মতো করে তোমরা প্রস্তুতি নাও, শুভকামনা।

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -

Leave a Comment

Join Group

Telegram

X Close Ad