একাদশ শ্রেণির দ্বিতীয় সেমিস্টারের বাংলা ‘ক’ পাঠ্যপুস্তক এর পূর্ণাঙ্গ সহায়ক পাঠ হিসেবে সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ প্রবন্ধ-সংকলন থেকে চারটি প্রবন্ধ পাঠ্য দেওয়া রয়েছে; যেগুলি হল- ‘বই কেনা’, ‘আজব শহর কলকেতা’, ‘পঁচিশে বৈশাখ’, ‘আড্ডা’।
এই প্রতিটি প্রবন্ধ থেকে সংসদ নমুনা প্রশ্নপত্রে যে প্রশ্নগুলি দেওয়া রয়েছে তার উত্তর নিচে দেওয়া রইল। যেহেতু স্কুল থেকে প্রশ্ন হবে তাই অতিরিক্ত প্রশ্ন দিয়ে বিভ্রান্ত না করে, তোমাদের জন্য প্রতিটি প্রবন্ধের বিষয়বস্তু বা সারাংশ তৈরি করে দেওয়া রয়েছে, সেগুলি দেখে নিতে পারো। সেগুলো থেকে অনায়াসে সমস্ত প্রশ্নের উত্তর লেখা যাবে।
বই কেনা (Boi Kena)
মার্ক টুয়েনের লাইব্রেরীর বিশেষত্ব কি ছিল? আঁদ্রে জিদে কিভাবে তার লেখক বন্ধুদের শিক্ষা দিয়েছিলেন? (সংসদ নমুনা)
📘 👉🏻 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে মার্ক টুয়েন (Mark Twain) ছিলেন একজন বিশ্ববিখ্যাত আমেরিকান লেখক। তাঁর লাইব্রেরি ছিল ব্যতিক্রমী ও বিস্ময়কর।
তাঁর লাইব্রেরি এত বইয়ে ভর্তি ছিল যে, মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত শুধুই বই ছিল। বইয়ের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে, কার্পেটের উপরও স্তূপীকৃত হয়ে বই পড়ে থাকত। ঘরে পা ফেলা দায় হয়ে যেত। এত বই থাকলেও শেলফ তেমন ছিল না, কারণ শেলফ কেনার সামর্থ্য ছিল না বা সে ব্যবস্থা করেননি। তাঁর অধিকাংশ বই ছিল বন্ধুদের কাছ থেকে ধার নেওয়া, যেগুলো হয়তো তিনি আর ফেরত দেননি।
একবার এক বন্ধু মার্ক টুয়েনকে বলেছিলেন, “তোমার লাইব্রেরির বইগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কিছু শেলফ কেনো না?” তাতে মার্ক টুয়েন মজা করে উত্তর দিয়েছিলেন, “বইগুলো তো বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে ধার নিয়ে জোগাড় করেছি, কিন্তু শেলফ তো আর বন্ধুর কাছ থেকে ধার চেয়ে নেওয়া যায় না!”
➤ আঁদ্রে জিদ ছিলেন একজন বিখ্যাত ফরাসি লেখক। তিনি রাশিয়া থেকে ফিরে এসে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমালোচনা করে একটি বই প্রকাশ করেন। কিন্তু তাঁর বেশিরভাগ লেখক বন্ধু, যারা তার সাথে ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তখন তার সমর্থনে কিছুই বলেননি বা তাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেননি। জিদ এতে খুব আঘাত পান এবং তাদের শিক্ষা দিতে এক অভিনব কৌশল নেন—
তিনি ঘোষণা করেন যে, তিনি তার লাইব্রেরির সমস্ত বই নিলামে বিক্রি করবেন। তিনি শুধুমাত্র সেইসব বই নিলামে তোলেন, যেগুলো তার লেখক বন্ধুরা তাকে স্বাক্ষর-সহ উপহার দিয়েছিলেন। খবরটি ছড়িয়ে পড়তেই প্যারিসের সাহিত্যজগতে হৈচৈ পড়ে যায়। লোকজন ছুটে আসে নিলামে। যারা জিদের পাশে দাঁড়াননি, তারা বুঝতে পারেন, জিদ আসলে তাদের “বাতিল করা জঞ্জাল” নিলামে তুলেছেন। এতে তারা ভয়ানক অপমানিত হন। দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে নিজেদের বই কিনে ফেরত নেন – যেন নিলামের খবর ছড়িয়ে না পড়ে, তাই অপমানিত লেখকরা নিজেরাই তাদের বই দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে কিনে নেন এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিজেদের বইগুলো গোপনে ফিরিয়ে আনেন।
এই ঘটনা এত আলোড়ন তুলেছিল যে, রয়টারস (Reuters) সংস্থা এটি বেতারে সম্প্রচার করেছিল এবং এর প্রতিধ্বনি ভূমধ্যসাগরের জাহাজ পর্যন্ত পৌঁছেছিল!
“কথাটা যে খাঁটি, সে কথা চোখ বন্ধ করে একটুখানি ভেবে নিলেই বোঝা যায়।” – এখানে কোন কথার উল্লেখ করা হয়েছে?
অথবা, “আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন” – আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে কি বলেছেন?
📘 👉🏻 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে আনাতোল ফ্রাঁস দুঃখ করে বলেছেন,–
"হায়, আমার মাথার চতুর্দিকে যদি চোখ বসানো থাকতো, তাহলে আচক্রবালবিস্তৃত এই সুন্দরী ধরণির সম্পূর্ণ সৌন্দর্য একসঙ্গেই দেখতে পেতুম।"
– এই উক্তির গভীর ভাবার্থ বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায়, ফ্রাঁস প্রকৃত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা নিয়ে একধরনের আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন। মানুষ তার দুই চোখ দিয়ে কেবল সামনের দিকই দেখতে পায়, কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আমাদের দৃষ্টির পরিধি সীমিত। মাছির মতো যদি মানুষের মাথার চারপাশে চোখ থাকতো, তাহলে সে একসঙ্গে পুরো পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে পারতো। কিন্তু শারীরিকভাবে তা সম্ভব নয়, তাই ফ্রাঁস দুঃখ করেছেন।
তবে ফ্রাঁস শুধু হতাশা প্রকাশ করেননি, বরং তিনি একটি দার্শনিক সমাধানও দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,–
"কিন্তু আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি কিংবা দুটি নয়। মনের চোখ বাড়ানো-কমানো তো সম্পূর্ণ আমার হাতে। নানা জ্ঞানবিজ্ঞান যতই আমি আয়ত্ত করতে থাকি, ততই এক একটা করে আমার মনের চোখ ফুটতে থাকে।"
–এই কথার মাধ্যমে ফ্রাঁস বোঝাতে চেয়েছেন, শারীরিক চোখ সীমাবদ্ধ হলেও জ্ঞান, শিক্ষা ও অভিজ্ঞতার মাধ্যমে মনের চোখ উন্মোচন করা সম্ভব। যত বেশি জ্ঞান আহরণ করা যাবে, তত বেশি এই দৃষ্টিশক্তি প্রসারিত হবে, এবং ততই আমরা দুনিয়াকে গভীরভাবে বুঝতে পারব।
সুতরাং, ফ্রাঁসের দুঃখের মূল কথা হলো—মানুষের যদি আরো গভীর দৃষ্টি থাকতো, যদি সে সবকিছু পুরোপুরি বুঝতে পারতো, তাহলে সে পৃথিবীর সৌন্দর্য ও বাস্তবতাকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করতে পারতো। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মানুষ এই সীমাবদ্ধতা নিয়েই বাঁচে। এই জন্যই লেখক শেষে উপসংহার টেনেছেন “চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? প্রথমত-বই পড়া, এবং তার জন্য দরকার বই কেনার প্রবৃত্তি।” অর্থাৎ, শারীরিক চোখের পরিবর্তে জ্ঞানের চোখ প্রসারিত করাই মানুষের প্রকৃত মুক্তি।
“গল্পটা সকলেই জানেন।”- গল্পটি কী? গল্পটি উল্লেখের কারণ কী?
📘 👉🏻 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক একটি প্রাচীন আরব্য রূপকথার গল্প উল্লেখ করেছেন, যেখানে এক রাজা ও এক হেকিমের প্রতিহিংসার কাহিনি বর্ণিত হয়েছে।
➤ এক রাজা ছিলেন, যিনি একজন হেকিমের একখানা বই পেতে চেয়েছিলেন কিন্তু হেকিম সেই বই দিতে রাজি হননি, তাই রাজা তাঁকে খুন করলেন এবং বইটি নিয়ে নিলেন। বইটি খুলে পড়তে গিয়ে তিনি দেখলেন, পাতাগুলো একটির সঙ্গে আরেকটি লেগে আছে। তাই প্রতিটি পাতা উল্টানোর জন্য তিনি আঙুলে থুতু লাগিয়ে পৃষ্ঠাগুলো আলাদা করছিলেন। কিন্তু হেকিম আগে থেকেই প্রতিশোধের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন—তিনি প্রতিটি পাতার কোণে বিষ মাখিয়ে রেখেছিলেন। ফলে রাজা বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
➤ লেখক এই গল্পের মাধ্যমে বাঙালির বই কেনার প্রতি উদাসীনতা এবং পাঠাভ্যাসের অভাব নিয়ে ব্যঙ্গ করেছেন। লেখক বলছেন, বাঙালির বই কেনার প্রতি এমন অনাগ্রহ যে, দেখে মনে হয় তারা যেন এই গল্পটি জানে! গল্পে যেমন রাজা বই পড়ে মারা গিয়েছিলেন, তেমনি বাঙালির আচরণ দেখে মনে হয়, তারা বইকে এড়িয়ে চলার পেছনে কোনো ভয় পেয়ে বসে আছে। লেখকের মতে, বাঙালির মধ্যে জ্ঞানতৃষ্ণা থাকলেও, তারা বই কেনার বেলায় পিছিয়ে থাকে। বাঙালির মধ্যে জ্ঞান অর্জনের ইচ্ছা থাকলেও, বই কেনার অভ্যাস গড়ে ওঠেনি, যা তাদের অগ্রগতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এই গল্প উল্লেখ করে লেখক বাঙালির অবহেলা, কৃপণতা এবং বই কেনার অনীহাকে ব্যঙ্গ করেছেন। তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, বই পড়া মানেই বিষপান নয়, বরং জ্ঞান অর্জনের পথ। কিন্তু বাঙালি যেন ভুলবশত বইকে ভয় পায়, ঠিক যেমন রাজা হেকিমের বিষাক্ত বইয়ের কারণে মারা গিয়েছিলেন!
“সংসারে জ্বালা যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে…” –উপায়টি সংক্ষেপে লেখো। অথবা, চোখ বাড়াবার পন্থাটা কি? পন্থাটি সংক্ষেপে লেখো।
📘 👉🏻 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে সংসারের জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে মুক্তির শ্রেষ্ঠ উপায় হলো মনের গভীরে নিজস্ব এক ভুবন সৃষ্টি করা, যেখানে দুঃখ-কষ্ট প্রবেশ করতে পারে না। বারট্রান্ড রাসেল যেমন বলেছেন, “সংসারে জ্বালা-যন্ত্রণা এড়াবার প্রধান উপায় হচ্ছে, মনের ভিতর আপন ভুবন সৃষ্টি করে নেওয়া এবং বিপদকালে তার মধ্যে ডুব দেওয়া।” কিন্তু এই নিজস্ব জগৎ তৈরি হবে কীভাবে? সৈয়দ মুজতবা আলী তাঁর ‘বই কেনা’ প্রবন্ধে স্পষ্ট করে দিয়েছেন—এই ভুবন সৃষ্টি করতে গেলে সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, ভূগোল ও বিজ্ঞানসহ নানা বিষয় পড়তে হবে, জানতে হবে।
➤ আনাতোল ফ্রাঁস আফসোস করে বলেছিলেন, “হায়! আমার মাথার চারপাশে যদি চোখ থাকতো, তাহলে পুরো পৃথিবীর সৌন্দর্য একসঙ্গে দেখতে পারতাম।” কিন্তু তাঁর উপলব্ধি ছিল আরও গভীর—“আমার মনের চোখ তো মাত্র একটি বা দুটি নয়, যত বেশি জ্ঞান অর্জন করি, ততই নতুন চোখ খুলতে থাকে।” অর্থাৎ, মনের চোখ বাড়ানোর একমাত্র উপায় হলো বই পড়া।
➤ বই আমাদের বাস্তব জীবনের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে নতুন নতুন ভাবনার দিগন্ত খুলে দেয়। যে মানুষ বই পড়ে, সে নিজের ভুবন তৈরি করতে পারে, দুঃখের চেয়েও বড় হয়ে উঠতে পারে। আর যে বই পড়ে না, সে যেন রাজা ও হেকিমের সেই গল্পের মতো—জ্ঞানকে ভয় পেয়ে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখে, আর অন্ধকারেই বন্দি থাকে। তাই সংসারের যন্ত্রণা এড়াতে ও দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত করতে চাইলে, বই পড়াই শ্রেষ্ঠ উপায়।
বিস্তারিত বিষয়বস্তু: বই কেনা – সৈয়দ মুজতবা আলী
আজব শহর কলকেতা
‘আজব শহর কলকেতা’য় ফরাসী বইয়ের দোকান দেখে লেখকের মনে কিরূপ ভাবের উদয় হয়েছিল? দোকানের ভিতর ঢুকে লেখক কিরূপ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করলেন? (সংসদ নমুনা)
📘 👉🏻 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘আজব শহর কলকেতা’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন তিনি ছেলেবেলা থেকেই কলকাতাকে আজব শহর বলে শুনে এসেছেন, কিন্তু একদিন সত্যিই এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়। বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে তিনি “ফ্রেঞ্চ বুক শপ” নামে একটি দোকান দেখতে পান। কলকাতার বুকে শুধুমাত্র ফরাসি বই বিক্রির দোকান দেখে তিনি অবাক হন এবং কৌতূহলবশত ভেতরে প্রবেশ করেন। তিনি ভাবেন, এক ফরাসি পথ হারিয়ে কলকাতায় এসে বইয়ের দোকান খুলেছে, অথচ বাঙালি প্রকাশকরাও বলেন যে শুধু ভালো বই বিক্রি করে ব্যবসা করা সম্ভব নয়।
➤ দোকানের ভেতরে গিয়ে দেখেন, সত্যিই শুধু ফরাসি বইয়ের সম্ভার! অগোছালোভাবে সাজানো বই দেখে মনে হয়, দোকানদার বাঙালির মতোই বই সাজিয়েছেন। এরপর এক বিদেশিনী তাঁর সামনে এসে ফরাসিতে কথা বলেন, যা লেখকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ইংরেজিতে কথা বলার চেষ্টা করলেও মেমসাহেব বোঝেন না। বাধ্য হয়ে লেখক টুকটাক ফরাসি বললে মেমসাহেব খুশি হয়ে প্রশংসা করেন এবং কথোপকথন জমে ওঠে।
তিনি জানতে পারেন, দোকানটি মেমসাহেবের নয়, এক বান্ধবীর, এবং তিনি ফরাসি ভাষার প্রচারের উদ্দেশ্যে এখানে বসেছেন। এরপর এক বাঙালি যুবক “কমার্শিয়াল আর্ট” বিষয়ক বই খোঁজে, যা দেখে লেখকের মনে আনন্দ জাগে। পরে তিনি ন্যুরনবর্গ ট্রায়ালের দলিল থেকে লেখা হিটলারের চরিত্র বিশ্লেষণের একটি বই খুঁজে পান।
এভাবে বিদেশিনীর সঙ্গে মাতৃভাষায় কথা বলার আনন্দ লেখকের মনে এক বিশেষ অভিজ্ঞতা এনে দেয়। তিনি বুঝতে পারেন, ভাষার সৌন্দর্য শুধু শুদ্ধতার ওপর নির্ভর করে না, আন্তরিক প্রচেষ্টাও মানুষকে গ্রহণযোগ্য করে তোলে। এই অভিজ্ঞতা লেখকের মনে গভীর ছাপ ফেলে। কলকাতা সত্যিই এক আশ্চর্য শহর, যেখানে প্রতিনিয়ত এমন কিছু ঘটে যা বিস্ময় জাগায়।
বিস্তারিত বিষয়বস্তু: আজব শহর কলকেতা – সৈয়দ মুজতবা আলী
পঁচিশে বৈশাখ
‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে সৈয়দ মুজতবা আলি গান ছাড়া রবীন্দ্রনাথের অন্য কোন্ কোন্ গুণের উল্লেখ করেছেন? তাঁর কাছে কবির গান অসম্পূর্ণ রূপে প্রতিভাত হয় না কেন? (সংসদ নমুনা)
📘 👉🏻 সৈয়দ মুজতবা আলি তাঁর ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে রবীন্দ্রনাথের অসাধারণ প্রতিভার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেছেন। তিনি রবীন্দ্রনাথকে একজন উৎকৃষ্ট ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, নাট্যকার, কবি, গবেষক ও শিক্ষাবিদ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তাঁর মতে, রবীন্দ্রনাথের উপন্যাস উৎকৃষ্ট, ছোটগল্পে তিনি মপাসাঁ ও চেখভকে ছাড়িয়ে গেছেন, নাটকে যে-কোনো মিস্টিকের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন এবং তাঁর রাজনৈতিক দূরদৃষ্টি ভারতবাসীর জন্য যুগে যুগে শিক্ষাপ্রদ হবে।
তবে মুজতবা আলির ব্যক্তিগত বিশ্বাস, রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বেশি স্মরণীয় হয়ে থাকবেন তাঁর গানের জন্য। রবীন্দ্রসঙ্গীত কখনো অসম্পূর্ণ মনে হয় না, কারণ তা নিজেই এক পূর্ণাঙ্গ শিল্প। সাধারণত কিছু গান শুনে মনে হয়, এটি আরেকটু দীর্ঘ হলে ভালো লাগত, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গান হৃদয়ে এক গভীর রস আস্বাদন করিয়ে যায়, যা বারবার শোনার জন্য তীব্র আকর্ষণ তৈরি করে।
লেখক রবীন্দ্রসঙ্গীতকে নটরাজের নৃত্যের সঙ্গে তুলনা করেছেন—যেমন নটরাজের প্রতিটি অঙ্গভঙ্গি নিখুঁত, তেমনই রবীন্দ্রনাথের গানের প্রতিটি শব্দ অপরিবর্তনীয় ও নিখুঁত। তাঁর গান আমাদের একদিকে স্বর্গীয় ভাবনায় ভাসিয়ে নেয়, আবার মর্ত্যের পৃথিবীকেও নতুন করে আবিষ্কার করায়। তাই রবীন্দ্রনাথের গান কখনো নিঃশেষ হয় না; প্রতিবার শোনার সঙ্গে সঙ্গে তার নতুন রূপ ধরা দেয়, এবং এভাবেই তা মানুষের চিরকালীন সম্পদ হয়ে থাকে।
বিস্তারিত বিষয়বস্তু: পঁচিশে বৈশাখ – সৈয়দ মুজতবা আলি
আড্ডা
“বাড়ির আড্ডায় ‘মেল’ মেলে না”- এরূপ উক্তির কারণ কী? লেখক কোথায় কাদের সঙ্গে আড্ডা দিতেন? (সংসদ নমুনা)
📘 👉🏻 বিখ্যাত সাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘পঞ্চতন্ত্র’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত ‘পঁচিশে বৈশাখ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক মনে করেন, আড্ডা হচ্ছে মুক্তচিন্তার ক্ষেত্র, যেখানে
ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান, অর্থবিত্ত বা আতিথেয়তার কোনো প্রভাব থাকে না। কিন্তু যদি আড্ডা কারও বাড়িতে হয়, তাহলে সেই নিরপেক্ষতা ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে না। গৃহস্বামী বা গৃহকর্ত্রী আতিথেয়তা প্রদান করায় বাকিরা তার প্রতি স্বাভাবিকভাবেই শ্রদ্ধাশীল হয়ে ওঠেন, ফলে সমানভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ব্যাহত হয়। তাছাড়া, বাড়ির গিন্নীর অসন্তোষ বা আভাস-ইঙ্গিত আড্ডার স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট করতে পারে। এজন্য লেখক মনে করেন, “বাড়ির আড্ডায় ‘মেল’ মেলে না।”
➤ লেখক কাইরোর বিখ্যাত “কাফে দ্য নীল”-এ আড্ডা দিতেন। সেখানে নানা জাতিগোষ্ঠীর মানুষ ছিলেন, যেমন— রমজান বে ও সজ্জাদ এফেন্দি (মিশরীয় মুসলমান), ওয়াহহাব আতিয়া (কপ্টিক খ্রিস্টান, ফারাওদের বংশধর), জুনো (ফরাসি কবি), মার্কোস (গ্রীক ব্যবসায়ী) -এরা প্রত্যেকেই ভিন্ন সংস্কৃতি থেকে এলেও আড্ডার টেবিলে সবাই সমান ছিল। এখানে সাহিত্য, রাজনীতি, প্রেম, ইতিহাস, অর্থনীতি, ব্যবসা—সবকিছু নিয়ে আলোচনা হতো। লেখক এই বহুজাতিক, প্রাণবন্ত এবং মুক্ত আড্ডার পরিবেশ উপভোগ করতেন, যা কোনো গৃহস্থ বাড়ির পরিবেশে সম্ভব নয়।
মূল বিষয়বস্তু: আড্ডা – সৈয়দ মুজতবা আলী
আমাদের হোয়াটসঅ্যাপ ও টেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -