স্বামী বিবেকানন্দ বাংলা প্রবন্ধ রচনা (বীরেশ্বর বিবেকানন্দ) Swami Vivekananda Bengali Prabandha Rachana

EduTips Tutor

Published on:

Swami Vivekananda Bengali Prabandha Rachana

স্বামী বিবেকানন্দ সম্পর্কে জানেনা এরকম বাঙালি খুব কমই রয়েছে! স্কুল, মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিক সব ক্ষেত্রেই বাংলা বিষয়ের দশ নম্বর প্রবন্ধ রচনার ক্ষেত্রে স্বামীজীর জীবনী বোর্ডের ফাইনাল পরীক্ষার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আজকে তোমাদের স্বামী বিবেকানন্দ প্রবন্ধ রচনা শেয়ার করা হলো

স্বামী বিবেকানন্দ প্রবন্ধ রচনা: Swami Vivekananda Bengali Rachana

বীরেশ্বর বিবেকানন্দ

ভূমিকা :–

❝হে ভারত ভুলিও না, নীচ জাতি, মূর্খ্য, দ্ররিদ্র, অজ্ঞ, মুচি, মেথর তোমার রক্ত, তোমার ভাই❞

 –যিনি বজ্রকণ্ঠে ভারতবাসীকে শোনালেন নবজীবনের এই অগ্নিমন্ত্র। যাঁর ‘জিয়ন কাঠির স্পর্শে’ নিস্তরঙ্গ বাঙালির জীবনে আনলো দুর্বার যৌবন স্রোত। তিনি নবজীবনের মন্ত্র উদ্‌গাতা, নবজাগরণের পথিকৃৎ বীর বীরেশ্বর বিবেকানন্দ।

   কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রোমা রোঁলা-কে বলেছিলেন,– ❝If you want to know India, read Vivekananda.❞

জন্ম ও বংশপরিচয় :–

কলকাতার সিমলার বিখ্যাত দত্ত পরিবারে ১৮৬৩ খ্রিস্টাব্দের ১২ই জানুযারি তিনি জন্মগ্রহন করেন। পিতা বিশ্বনাথ দত্ত ছিলেন হাইকোর্টের আইনজীবি। মাতা ধর্মপ্রানা ভুবনেশ্বরী দেবী। পোশাকি নাম ছিল নরেন্দ্রনাথ দত্ত। মাতৃদত্ত নাম বীরেশ্বর, ডাকনাম ‘বিলে’

শৈশবকাল :–

ছোটবেলা থেকেই তিনি ছিলেন অভ্যন্ত মেধাবী, সাহসি এবং জেদি। অজানাকে জানার এবং সবকিছুকে খুঁটিনাটি যাচাই করার এক অদ্ভুত প্রতিভা ছিল তাঁর। তিনি ছোটবেলায় ঘোড়াগাড়ি চড়তে খুব পছন্দ করতেন। তিনি ছোটবেলায় অদ্ভুত এক ‘ধ্যান ধ্যান’ খেলা খেলতেন।

শিক্ষাজীবন :–

তিনি মেট্রোপলিটন স্কুলে নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে ভর্তি হন। সেখানে প্রথম বিভাগে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি স্কটিশচার্চ কলেজে ভর্তি হন। সেখানে দর্শনশাস্ত্রে বি.ত্র. পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তিনি ছিলেন মধুর কন্ঠের অধিকারী। আবৃত্তি, বক্তৃতা ও গানে তাঁর ছিল গভীর আগ্রহ।

রামকৃষ্ণ দেবের সান্নিধ্য :–

নরেন্দ্রনাথ ঈশ্বর জিজ্ঞাসার নানা প্রশ্ন নিয়ে দক্ষিনেশ্বরের প্রেমের ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের কাজে গেলেন। প্রথম দর্শনে দুজনেই দুজনকে দেখে অভিভূত হয়ে গেলেন। তার সান্নিধ্যে তিনি নবচেতনায় উদ্বুত্ব হলেন। কিন্তু ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে এই বন্ধন ছিন্ন হল। সাময়িক বিমূঢ় হলেন তিনি। তারপর শুরু করলেন ভারত উদ্ধারের কাজ। অন্যান্য গুরুভাইদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন ❝রামকৃষ্ণ মঠ❞।

ভারত পর্যটক বিবেকানন্দ :–

ভারতপথিক বিবেকানন্দ হিমালয় থেকে কন্যাকুমারী পর্যন্ত পায়ে হেঁটে ঘুরলেন। মিশলেন সাধারণ শ্রমজীবি মানুষের সঙ্গে। অনুভব করলেন মানুষের হৃদয়ের জীবন যন্ত্রনা। তাঁর অগ্নিগর্ভ বাণীতে স্পন্দিত হল আসমুদ্র হিমাচল।

শিকাগো ধর্মসম্মেলনে যোগদান :–

অবশেষে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষন। ১৮৯৩ খ্রিঃ ১১ই সেপ্টেম্বর। ভক্তদের অনুরোধে পাড়ি দিলেন আমেরিকা। কিন্তু ধর্মসম্মেলনে তাঁর ছাড়পত্র নেই। অবশৃষে মহৎ আমেরিকাবাসীর সহায়তায় পাঁচমিনিটের জন্য বক্তৃতা দেবার সুযোগ পেলেন। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবকে স্মরন করে উষ্ণ কণ্ঠে শ্রোতাবর্গকে আমন্ত্রিত করলেন,–

❝ My brother and sister of America....❞

    মুহূর্তের উচ্ছচ্ছিত করতালিনতে ধর্মসভা অভিনীত হয়ে পড়ল। তিনি ভাষনে বললেন,–

 ❝খ্রিস্টানকে হিন্দু হতে হবে না, হিন্দু বা বৌদ্ধকেও খ্রিস্টান হবার প্রয়োজন নেই,… প্রত্যেক ধর্মের পতাকায় লেখা হোক যুদ্ধ নয়, ধ্বংস হয়, ভেদদ্বন্দ্ব নয়, শুধু সামঞ্জস্য এবং শান্তি।❞

   –মহামিলনের এই বার্তায় চারিদিকে প্রশংসিত হলেন। শিষ্যারুপে তিনি পেলেন মিস্ মার্গারেট নোবেল, যিনি ভারতের মাটিতে ভগিনী নিবেদিতা।

সংগঠক বিবেকানন্দ :–

স্বদেশে ফিরে বিবেকানন্দ ক্লান্তিহীন কর্মী হিসাবে বিভিন্ন সাঙ্গগঠনিক কাজে ডুবে গেলেন। বিবেকানন্দ ১৮৯৭ খ্রিস্টাবে প্রতিষ্ঠা করলেন মানব সেবার অন্যতম প্রতিষ্ঠান ❝রামকৃষ্ণ মিশন❞। ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে গড়ে উঠল পরিকল্পিত ব্রহ্মচর্য আশ্রম। ১৮৯৯ সালে গঙ্গার পশ্চিমপাড়ে গড়ে উঠল অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান ❝বেলুড় মঠ❞

সাহিত্যকীর্তি :–

শুধু কর্মের জগতেই নয়, সাহিত্যের জগতেও তার ছিল অমরকীতি। তাঁর ❝পরিব্রাজক❞, ❝প্রাচ্য-প্রাশ্চাত্য❞, ❝বর্তমান ভারত❞, ❝ভাববার কথা❞, ❝Karma yoga❞, ❝Raj yoga❞, ❝Bhaktiyoga❞, ❝Jana yoga❞, প্রবন্ধ ও অজস্র চিঠিপত্র, বাণী মুদ্রিত আছে। যেখানে রয়েছে তাঁর জ্বলন্ত দেশপ্রেমের আদর্শ এবং যুক্তিনিষ্ঠ মতামত।

মহাতাপসের সমাধিমগ্ন :–

❝জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে?❞  –বিবেকানন্দও এই নিয়মের অধীন। ১৯০০ খ্রিঃ প্যারিস থেকে দেশে ফিরে তার স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটতে থাকলো। অবশেষে ১৯০২ খ্রিঃ ৪ঠা জুলাই মাত্র ঊনচল্লিশ বছর বয়সে তিনি সমাধিস্থ হলেন।

উপসংহার :–

  ❝বীর সন্ন্যাসী বিবেকের বানী ছুটেছে জগতময়❞ –সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত

আধুনিক ভারতের ভগিরথ, নবযুগের চালক, তমসাচ্ছন্ন আদর্শভষ্ট জাতিকে অভিশাপমুক্ত করতে তাঁর পুণ্য আবির্ভাব। মানব জাতিকে মানবসেবার মন্ত্রে দীক্ষিত করাই ছিল তার জীবনসাধনা।

  তিনি বলেছিলেন, ❝স্বদেশবাসীই আমর প্রথম উপাস্য, অসহায় মানুষই আমার ঈশ্বর।❞ আর চরম সত্য জানিয়ে গেলেন,–

❝বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর –
জীবেপ্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।❞

তোমাদের পরীক্ষাতে বিভিন্নভাবে ঘুরিয়ে অনেক সময় একই জিনিস সেক্ষেত্রে তোমরা নিজেদের কিছু ইউনিক টাইটেল বা স্টাইলে লিখলে ভালো নম্বর স্কোর করতে পারবে।

আমাদের হোয়াটসঅ্যাপটেলিগ্রাম Study গ্রুপে যুক্ত হোন -

Leave a Comment

Join Group

Telegram

X Close Ad